তাঁদেরকে
সবাই বলে ‘ভিখিরিদের ডাক্তার’। তাঁদের বলতে ডাক্তার অভিজিৎ আর মনীষা সোনাওনে-কে।
পুনের পথে-ঘাটে, মন্দিরের
পাশে, মসজিদের চাতালে লুটিয়ে থাকা গৃহহীন, ফুটপাতবাসী, ভিখারি মানুষদের চিকিৎসার দায়িত্ব
স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই ডাক্তার দম্পতি। পুনের অন্যান্য বিখ্যাত
চিকিৎসকদের মতো ঝাঁ চকচকে নিজস্ব চেম্বার বা নার্সিং হোম তাঁদের না-ই বা হল,
এইসব আশ্রয়হীন, অসহায় মানুষদের জন্য এই
আয়ুষ্কালেই কিছু করে যেতে তাঁরা। ফলে, ‘ভিখিরিদের
ডাক্তার’ সম্বোধনেও তাঁদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। বরং, এই
পরিচয়েই তাঁরা খুশি। তাঁরা চান, এই কাজে অন্যরাও পাশে এসে
দাঁড়াক। ঝাঁ চকচকে নার্সিং হোম, বেসরকারি হাসপাতালের
ডাক্তারের তকমা গায়ে একবার লেগে গেলে, সেই সুযোগটাও হয়ত
মিলবে না।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি পুনের বিভিন্ন রাস্তায়,
মসজিদ-মন্দির-বাজার চত্বরে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা করেন সোনাওনে
দম্পতি। মোট ১১০০ জন ফুটপাতবাসীকে টানা ১৫ দিন চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালান
তাঁরা। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কিংবা বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা তো আছেই।
ডাক্তার অভিজিৎ সোনাওনে বলছিলেন, “ফুটপাতে বসবাস করা এইসব
মানুষদের শরীরেও হাজারো অসুখ রয়েছে। চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। ফলে,
প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকুও তাঁরা পান না। তাঁরা নিজেরাও ভাবতে পারেন
না, কেউ তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। আমরা সেই প্রাথমিক
চিকিৎসাটুকু পৌঁছে দেওয়ারই চেষ্টা করছি মাত্র।”
এই চেষ্টা যে ‘সামান্য’ নয়, তা বুঝতে
অসুবিধে হয় না। শুধু চিকিৎসাই নয়, এইসব মানুষদের
মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চালাচ্ছেন ডাক্তার দম্পতি। চেষ্টা করছেন বিকল্প
রোজগারের পথ খুঁজে দিতে। এই উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন পড়ছে সাহায্যেরও। ‘সোহম
ট্রাস্ট’-এর মাধ্যমে তাই অন্যান্য মানুষদেরও পাশে থাকার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।