‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটার কথা মনে আছে? ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র হয়েও ওয়েব ক্যামেরায় চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে সফলভাবে সন্তান প্রসব করিয়েছিল আমির খান অভিনীত চরিত্র ছাত্র ‘র্যাঞ্চো’। কিন্তু সিনেমার পর্দার বাইরে, বাস্তবের দুনিয়ায় কি এমনটা সম্ভব? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য লাগলেও সত্যি। প্রসূতি মা এবং সদ্যোজাত সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে এবার এই পথেই হেঁটেছেন ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) চিকিৎসক ডাঃ গণেশ বাবু (Ganesh Babu)।
না, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা হচ্ছে না। বিগত কয়েক বছর ধরেই ফোনের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসবে সাহায্য করে চলেছেন ছত্তিশগড়ের বারসুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই চিকিৎসক। অস্বীকার করার জায়গা নেই, ঘটনাস্থলে স্বয়ং উপস্থিত না থাকে, কেবলমাত্র ফোনে পরামর্শ দিয়ে সন্তান প্রসব করানো ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন অদ্ভুত ঘটনার কারণ কী?
আসলে বাধ্য হয়েই এই পথ বেছে নিতে হয়েছে গণেশবাবুকে। বছর কয়েক আগে বারসুরে বদলি হয়ে হয়ে আসার পরই তিনি লক্ষ করেন, গর্ভবতী অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও, সন্তান প্রসব করানোর সময় সাধারণত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে আসেন না বারসুরের মহিলারা। এমন ঘটনায় খানিক আশ্চর্যই হয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তাঁর সামনে স্পষ্ট হয় বিষয়টি। বারসুরে সবমিলিয়ে ২০টিরও বেশি গ্রাম নির্ভরশীল এই সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের ওপর। কিন্তু দূরের গ্রাম থেকে প্রসূতি মহিলাদের তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেই কোনো। উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অভাবের কারণে চিকিৎসকের পক্ষেও প্রসূতির বাড়ি দ্রুত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হয় না সবসময়। ফলে, স্থানীয় প্রসব-সহায়িকাদের ওপর নির্ভর করতে হয় তাঁদের। এমনকি অনেকক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও ঘটে তাতে।
এই সমস্যার সমাধান করতেই প্রযুক্তিকে বেছে নেন তিনি। নিজের পকেটের অর্থ খরচ করেই মোবাইল তুলে দেন গর্ভবতী মহিলাদের হাতে। সন্তান প্রসবের দিন কয়েক আগেই তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রসূতিদের বাড়ি পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধও। অন্যদিকে প্রসবের সময় ফোনের মাধ্যমেই প্রসব-সহায়িকাদের অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন ডাঃ গণেশ বাবু।
প্রথমে প্রতি মাসে এভাবেই ৮-১০ জন মহিলাকে সন্তান প্রসবে সাহায্য করতেন ছত্তিশগড়ের চিকিৎসক। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪০-এর কাছাকাছি। এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, গণেশবাবুর এই উদ্যোগে আগের তুলনায় কয়েকগুণ কমে এসেছে শিশুমৃত্যুর হার। এই আশ্চর্য প্রকল্পের জন্য বারসুরে আজ তিনি পরিচিত ‘মোবাইল-ওয়ালে ডক্টর’ নামে।
তবে এখানেই শেষ নয়। প্রসব-পরবর্তী সময়ে মা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্যও রুটিন মেনে গ্রামে গ্রামে অভিযান চালান ৫৯ বছর বয়সি চিকিৎসক। গ্রামীণ মানুষদের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে তাঁর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে বাধ্য যে-কেউ…
Powered by Froala Editor