যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন, একা বাইরে বেরোতে বা ছোটখাটো জমায়েতে তাঁদের আর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে এমনই বিজ্ঞপ্তি। ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে সেই বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকার বাইরেও। আর তার ফলেই বেশ কিছু বিতর্কেরও সূত্রপাত ঘটেছে। একদিকে যখন করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে বারবার মানুষকে সচেতন থাকার নির্দেশ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মাস্ক-স্যানিটাইজার এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বারবার, তখন এরকম নির্দেশিকা আরও অনেক প্রশ্নকে উস্কে দিচ্ছে। তবে আমেরিকায় ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ প্রতিষেধক পেয়েছেন। সেখানে যা সম্ভব, বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা ততটা সহজ নয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এই প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের জানালেন, “সিডিসি-র বিজ্ঞপ্তিতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, কেবলমাত্র প্রতিষেধক নেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের সময় মাস্ক অগ্রাহ্য করতে পারেন। কিন্তু যখন বড়ো কোনো জমায়েতের মধ্যে যেতে হবে, যেখানে প্রত্যেকে প্রতিষেধক নিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়, তখন মাস্ক ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে।” তবে মহামারীর আতঙ্কের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধির এই শিথিলতা মানুষকে অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিয়েছে। যদিও ভারতের মতো দেশে এটুকু শিথিলতার সময়ও এখনও আসেনি। ডঃ ভৌমিকের কথায়, “আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত ১০ শতাংশেরও কম মানুষ প্রতিষেধক পেয়েছেন। ফলে বাড়ির বাইরে পা রাখলে যতজন মানুষের মুখোমুখি হতে হবে, তাঁদের বেশিরভাগেরই ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিষেধক নেওয়া হলেও মাস্কের প্রতি অবহেলা করা যাবে না।”
অন্যদিকে সিডিসি-র এই বিজ্ঞপ্তিকে করোনা-পরবর্তী আমেরিকার সামনে এক মাইলস্টোন হিসাবেই মনে করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেইসঙ্গে মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের কাছেও এ এক বিরাট সাফল্য বলে মনে করছেন তিনি। সামান্য কয়েক মাসের মধ্যে সফলভাবে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া পরিচালনা সহজ ছিল না। কিন্তু আমেরিকার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রশাসনের মিলিত উদ্যোগে তা আজ অনেকটাই সফল। দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষের মধ্যে অনাক্রম্যতা জন্ম নিলে দেশকে করোনামুক্ত বলা যাবে অনায়াসে। আর সেই সময়ও খুব দূরে নেই। তবে কিছুদিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া অনেকটাই অসফল। কোথাও কোথাও একেবারেই শুরু হয়নি প্রতিষেধক দেওয়া। তাই আমেরিকার কাছে এই বিজ্ঞপ্তি আশার আলো দেখালেও মহামারীর আতঙ্ক পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে ঢের দেরি। আর এই সময় মানুষকে সচেতন থাকতেই হবে। প্রতিষেধক নেওয়া হলেও তাই মাস্কের ব্যবহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৯৬ শতাংশ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে ‘ডবল মাস্ক’, পরামর্শ চিকিৎসকদের