প্রদীপের আলো, সঙ্গে আতশবাজি – মোগল আমলেও পালিত হত ‘জশন-ই-চিরাঘান’

চলে গেল দীপাবলি। গোটা ভারত মেতে উঠেছিল আলোর উৎসবে। যেখানে কোনও ধনী-দরিদ্র ছিল না, ছিল না ধর্মের বাঁধন। এই সময়, যেখানে প্রতিটা পদে ধর্মের জুজু দেখানো হচ্ছে, সেখানে এই উৎসবগুলি অন্তত কিছুটা আশা জাগিয়ে রাখে। তবে শুধু কি এখন? সেই কবে থেকে দীপাবলি দেখে আসছে এই দেশ। সেখানে জড়িয়ে আছে কত গল্প, কত ইতিহাস। সেই আলোর ছটা থেকে বাদ যায়নি মোগলরাও। একেবারে আপন করে নিয়ে তাঁরা মেতে উঠেছিল আলোর আনন্দে।

মোগল আমলে অবশ্য দীপাবলি নামে পরিচিত ছিল না এই উৎসব। তবে নামটিও ছিল বাহারের, ‘জশন-ই-চিরাঘান’। কোনও পুজো, বা আচার বিচার নয়, নিছক আনন্দের জন্য, মন ভাল রাখার জন্য এই আলোর উৎসবে অংশ নিতেন তাঁরা। সেই সময়কার সমস্ত দুর্গগুলোকে সাজানো হত প্রদীপের আলোয়। এখনকার আধুনিক চিনা আলো, এলইডি আলোর বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে এই সময়। কিন্তু তাই বলে উজ্জ্বলতা কোনও অংশে কম ছিল না। আমাদের সেই চিরাচরিত লাল কেল্লা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠত। মূলত আকবরের আমলেই দীপাবলির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এটি। আকবর নিজেও অংশ নিতেন এই উৎসবে। আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি— দু’জায়গাই সেজে উঠত আলোয়। পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, ঔরঙ্গজেবের আমলেও চলেছিল ‘জশন-ই-চিরাঘান’। বাদশা এবং তাঁর মন্ত্রী পারিষদদের মধ্যে চলত উপহার বিনিময়। তাঁদের কাছে, এটি ছিল ভগবানের সৃষ্টির উদযাপন।

এখন শুধু আলোতে চলে না আমাদের। সঙ্গে থাকে আতসবাজি। না, শুধু আমরা একাই নই। তখনকার দিনেও আতসবাজি পোড়ানোর রীতি ছিল। ঠিকঠাক, সাবধানতার সঙ্গে পোড়ানো হচ্ছে কিনা, সেইসব দেখার জন্য রীতিমত একটা আলাদা পদই থাকত দরবারে। তাঁদের বলা হত ‘মীর আতিস’। এদেরই তত্ত্বাবধানে বাজি পোড়াত নগরবাসী এবং রাজদরবারের লোকেরা। কল্পনা করুন, গোটা নগরী আলোয় ঢেকে আছে, আলোর আলপনা ছড়িয়ে আছে। আর যমুনায় ভেসে যাচ্ছে প্রদীপের ফোঁটা। মোগল আমলই হোক, বা এখনকার ৫জির যুগ— দীপাবলির মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য কম হয়নি। রূপ হয়ত বদলেছে, কিন্তু মরচে পড়েনি।