চারপাশের সবকিছুই আলোয় ভরে থাকত একটা সময়। হঠাৎই অন্ধকার হয়ে গেল সব। চোখের সামনে নেমে এল কালো একটা পর্দা। কিন্তু, পায়ের তলায় যে সর্ষে! চোখ গেছে তো কী হয়েছে, শরীরটা তো ঠিক আছে। মনটাও। ব্যস, এটাই পাথেয় দিব্যাংশু গনত্রের। এই পথই তাঁর পরিচিতি তৈরি করেছে, ভারতের প্রথম ব্লাইন্ড প্যারা-গ্লাইডার হিসেবে।
কথায় কথায় আজও দিব্যাংশুর মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। তিনি জন্মান্ধ ছিলেন না। আর পাঁচটা শিশুর মতো বেড়ে উঠছিলেন। খেলা, পড়া এসবের মধ্যে দিয়েই কেটে যাচ্ছিল ছেলেবেলা। হঠাৎই কেমন অন্ধকার হতে শুরু করে সবটা। তখন দিব্যাংশুর বয়স ১৯। ডাক্তাররা বললেন, গ্লুকোমায় আক্রান্ত তিনি। তারপর, আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকারে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন
সমপ্রেমী, ‘দেশদ্রোহী’, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব মেগানই এখন বিশ্বসেরা ফুটবলার : একটি অন্য রূপকথা
কথায় বলে, মানুষের জীবনে ভাল সময়ও যেমন আসে, তেমনই আসে খুব খারাপ সময়ও। যা এক ঝটকায় সমস্তটা বদলে দিয়ে যায়। দিব্যাংশু গনত্রের জীবনেও তখন ছিল সেই ঝড়ের মুহূর্ত। ডিপ্রেশন, কষ্ট - সমস্ত কিছু চলে এসেছিল। রিহ্যাবে সবাই বলত, টেলিফোন অপারেটর বা চক তৈরির কাজ নাও। মানতে কষ্ট হত তাঁর। আর সেটাই ছিল তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু।
দিব্যাংশু বড় হয়েছিলেন পুনে শহরে। ছোট থেকেই সেখানকার পাহাড়ে চড়া বা ট্রেকিং করা লেগেই থাকত। গ্লুকোমায় চোখদুটো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর, সেসব ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবার সেটাকেই নিজের বেঁচে থাকার অস্ত্র করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ২০০৪ সাল। কোনো টেলিফোন অপারেটরের কাজ না, অ্যাডভেঞ্চারের জীবন কাটাবেন তিনি। আস্তে আস্তে শুরু করলেন সাইক্লিং, পাহাড়ে চড়া। অসুবিধা হত অনেক, কিন্তু তাও করতেন। সেই সঙ্গে ধরলেন আরও একটা জিনিস - প্যারা-গ্লাইডিং। প্রথম প্রথম প্রশিক্ষক থাকত। পরে এই সমস্ত বাধা অতিক্রম করলেন তিনি। একাই একাই সাইক্লিং, ক্লাইম্বিং, করা শুরু করলেন। সঙ্গে, অবশ্যই প্যারা-গ্লাইডিং।
আরও পড়ুন
সহ্যাদ্রী পর্বতমালার বন্য পথে একা ১২ দিনে ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি— বিরল নজির বঙ্গসন্তানের
২০১৪ সাল। আরও একটা বদল এল দিব্যাংশুর জীবনে। এবার ঝড় নয়, সাফল্য হয়ে। তিনি হলেন ভারতের প্রথম ব্লাইন্ড প্যারা-গ্লাইডার। সেই বছরই তিনি শুরু করলেন নিজের সংস্থা, অ্যাডভেঞ্চারস বিয়ন্ড বেরিয়ারস ফাউন্ডেশন বা এবিবিএফ। যারা শারীরিক দিক দিয়ে পিছিয়ে, তাঁরা যাতে নতুন উদ্যমে জীবনে ফিরতে পারেন, যাতে এই খেলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, সেটারি চেষ্টা চলে। আজ, ৪০ বছর বয়সে আর পিছনে ফিরে তাকান না দিব্যাংশু গনত্র। ভয়ও পান না। নিজের মতো করে পৃথিবীটাকে আবিষ্কার করে চলেছেন তিনি। আর সেই সঙ্গে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন বাকিদেরও।