এপ্রিলের গনগনে রোদ। প্রতিটা গলি তেতে উঠছে সূর্যের তাপে। তার মধ্যেই নওগাঁর বিহারি কলোনির মাঠে বসে আছেন এক বৃদ্ধা। পড়ে থাকা টিনের চালের ওপর কী যেন ছড়াচ্ছেন। কাছে গেলেই দেখা যাবে, ওগুলো ভাত! তবে ওরকমভাবে রাখছেন কেন? বৃদ্ধা মুখ তুলে তাকালেন। খাবার নেই কোথাও। দোকান বাজার বন্ধ। বাড়িতে মজুত জিনিস ফুরোচ্ছে। মেলেনি ত্রাণ। এই অবস্থায় পেটে কিছু দেওয়ার জন্যই পুরনো বাসি ভাত এইভাবে গরমে শুকোচ্ছেন। পরে সেটাকেই রান্না করে খাবেন তিনি!
আরও পড়ুন
করোনায় না হলেও আর্থিক দুরবস্থায় মৃত্যু বাড়বে দেশে, জানাচ্ছেন ডঃ জয়জিৎ ভট্টাচার্য
গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। সেই প্রভাব এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। সব জায়গায় আতঙ্ক। সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে আছে। প্রায় অঘোষিত লকডাউন হয়ে আছে ওপার বাংলায়। তাতেই বিপদে পড়েছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম। নওগাঁর বিহারি কলোনির ঝুপড়ি ঘরে থাকেন তিনি। সংসারের অবস্থাও ভালো নয়। একা থাকেন, ভিক্ষা করেই দিন কাটত। কিন্তু করোনার পরিস্থিতি তাঁর হেঁশেলেও থাবা বসিয়েছে। কিছুই নেই প্রায়। এদিকে ভিক্ষা হচ্ছে না বলে টাকাও নেই সেরকম। কিন্তু পেট কি মানে এসব!
আরও পড়ুন
করোনা রুখতে ভারতকে ১০০ কোটি ডলার অনুদান বিশ্ব ব্যাঙ্কের
সেই জন্যই এই উপায় বার করেছেন তিনি। চড়া রোদে মাঠে বাসি ভাত শুকনো করেন তিনি। শুকিয়ে চাল হয়ে এলে আবার এগুলোকেই রান্না করে খাবেন। এইভাবেই চলছে ওঁর জীবন। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে জায়গায় জায়গায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে! বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম তাকিয়ে থাকেন। তাঁদের মতো মানুষদের কাছে কি আর এত সহজে ত্রাণ পৌঁছয়? না, কোনো ত্রাণই পাননি তিনি। তাই বেঁচে থাকার এই যুদ্ধে টিকে থাকতেই এই উপায় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
ছেঁড়া রেনকোট-হেলমেট পরেই করোনার সঙ্গে লড়াই চিকিৎসকদের
শুধু সাবিয়া বেগম নন, বাংলাদেশে আরও বহু মানুষের এই অবস্থায় দিন কাটছে। ওই নির্দিষ্ট কলোনিতেই আরও বেশ কিছু পরিবারে ভাঁড়ার শূন্য। করোনা কাটুক, সবাই ঘরে থাকুক, সেটা তো ঠিকই। কিন্তু দিনের শেষে যদি এই মানুষগুলো খাবারই না পান? যারা দিনমজুর, তাঁদের কী হবে? ভেবে দেখেছি সেসব? ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাঙ্ক বলে দিয়েছে করোনা কাটলেই দারিদ্র্য নেমে আসবে বহু মানুষের মধ্যে। এইরকম চলতে থাকলে, সেটাই যে পরবর্তী ‘মহামারী’ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।