চলমান কপ-২৬ সম্মেলনে কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, বাকি পৃথিবীর চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণায়ন ঘটছে কানাডায় (Canada)। ট্রুডোর এই বক্তব্যকে ঘিরে ইতিমধ্যে নানা আলোচনা ঘটে গিয়েছে। তাঁর পরিবেশ নীতির জন্য সমালোচনাও করেছেন অনেকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ উদাহরণ হিসাবে কানাডার মতো প্রথম বিশ্বের দেশের উল্লেখ সত্যিই আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে। এমনিতে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের কথা উঠলেই আফ্রিকার দেশগুলির কথা উঠে আসে। অথচ, খুব বেশি আগের কথা নয়। চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসেই যে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ (Heatwave) চলেছিল কানাডাজুড়ে, ইতিহাসের তার জুড়ি মেলা ভার।
২০২০ সাল থেকেই একের পর এক দাবানলের ঘটনা ঘটছে কানাডায়। গত জুন মাসের মাঝামাঝি তেমনই আগুন লাগে লিটন শহরে। আগুন লাগার কারণ হিসাবে উঠে আসে নানা তত্ত্ব। কিন্তু এর মধ্যে একটি তথ্য সবাইকেই অবাক করে। যে লিটন শহরে ২০১৫ সালের আগে উষ্ণতা কখনও ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠেনি, চলতি বছর আগুন লাগার আগে সেখানে উষ্ণতা পৌঁছায় ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দাবানলের কারণ অনুসন্ধান করতে নেমে তাই স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি রিপোর্টে বলা হয়, যদিও প্রাকৃতিক কারণেই আগুন লেগেছে; কিন্তু মানুষের দীর্ঘদিনের কার্যকলাপ তার পিছনে দায়ী। নাহলে এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়।
একটানা দেড়মাস ধরে আগুন জ্বলার পর অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততদিনে লিটন শহরের মানুষের বসতি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগুনের হাত থেকে বাঁচতে শহর ছেড়েছেন ৮০ শতাংশ মানুষ। অনেকের পরিবার ততদিনে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। অনেকে ছেলেমেয়েকে কোনো আবাসনে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন, কিন্তু নিজেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পথে পথে। তার মধ্যেই কানাডার রিয়েল এস্টেটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আগুন নিভে গেলেও শহরে ফিরতে পারছেন না মানুষ। কারণ ঘরবাড়ি ততদিনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। অথচ লিটন শহরের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিবেশ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেভাবে সাড়া ফেলেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ থেকে যে উন্নত দেশগুলিও নিরাপদ অবস্থানে নেই, কানাডার ঘটনা যেন সেই কথাই প্রমাণ করে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কপ-২৬ সম্মেলনে ভারতীয় কিশোরীর বক্তৃতা, কে এই বিনিশা উমাশঙ্কর?