রাস্তার ওপরে পড়ে রয়েছে একটি উটের পচাগলা মৃতদেহ। পাশ দিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছেন একজন মানুষ। এই বীভৎস দৃশ্য দেখেও তাঁর মধ্যে কোনো উত্তাপ নেই। কারণ তিনি তখন তাঁর পোষ্য ছাগলদের খুঁজতে ব্যস্ত। খাবারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গিয়েছে সেই ছাগলগুলিও। প্রিয় পোষ্য বলে নয়, বরং এই ছাগলগুলিই যে তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। তবে গবাদি পশুর দামও রীতিমতো তলানিতে এসে ঠেকেছে। তবু তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেনিয়ার (Kenya) মানুষ। ওরা মারা গেলে আমরাও মরব – খরা (Drought) পরিস্থিতিতে এমনই মত কেনিয়ার মানুষদের।
একদিকে গ্লাসগো শহরে চলছে কপ-২৬ সম্মেলন। পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রনায়করা। আর এর মধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখা যাচ্ছে কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলে। পরপর ২ বছর অনাবৃষ্টিতে এখন পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছে এলাকা। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয়েছে খরার উপদ্রব। প্রায় এক মাস কেটে গেলেও এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সরকারের তরফ থেকে পাণীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও সারাদিন প্রতীক্ষার পর ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা গবাদি পশুদের নিয়েই। কারণ সাভানা তৃণভূমি অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষেরই জীবিকা পশুপালন। তাদের জন্য খাদ্য নেই। এমনকি জলও নেই। অনাহারে, তৃষ্ণায় শুকিয়ে যাচ্ছে পশুরা। অক্টোবর মাস থেকেই গবাদি পশুর দাম কমতে শুরু করে। আর এখন তাদের বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। গতবছরেও খরার কারণে চাষ-আবাদ ভালো হয়নি। এবছর একেবারেই ফসল ওঠেনি। আগের বছরের সঞ্চয়ও শেষ। এই পরিস্থিতিতে ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার শিশু এবং ৯৫ হাজার প্রসূতি অপুষ্টির শিকার। এমনটাই জানিয়েছে কেনিয়া সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা গিয়েছে আফ্রিকা মহাদেশেই। কিন্তু কেনিয়ার ছবি যেন সেই সব উদাহরণকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। কেনিয়ার সংকট মোকাবিলার উদ্দেশ্যে বিপুল অর্থনৈতিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে কপ-২৬ সম্মেলনে। তবে এভাবে হয়তো চলতি বছরটাও পেরিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে না পারলে আগামীদিনে কী হবে, জানেন না কেউই। কেনিয়ার মানুষের কাছে খরা কোনো নতুন ঘটনা নয়। সাহারা মরুভূমির গা ঘেঁষে থাকা দেশটিতে আগেও বহুবার খরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কিন্তু তা হয়তো ১০ বছর কি ১৫ বছর পরপর। তার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন সকলেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির এই ছন্দটাই হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই প্রথম পরপর ২ বার খরার কবলে পড়ল কেনিয়া। এর শেষ কোথায়, জানেন না কেউই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শীত পড়তেই চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা