Powered by Froala Editor
পুঁজিবাদ ফিরে এল ব্যুমেরাং হয়ে, টুইটারের ব্লু-টিক ও বিশ্বজোড়া বিতর্ক
১/১২
নজরুল লিখেছিলেন, ‘যত নাহি পাই দেবতা তোমায়, তত কাঁদি আর পূজি’। হ্যাঁ, ঈশ্বরের দর্শনলাভ যে-কোনো মানুষের কাছেই সোনার পাথরবাটি। তবে হঠাৎ যদি, স্বয়ং ঈশ্বরই নেমে আসেন মর্ত্যে? সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট করে প্রচার করতে শুরু করেন তাঁর বাণী?
২/১২
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের সৌজন্যে সম্ভব হল এই অসম্ভবও। ইলন মাস্কের টুইটারে এবার নতুন অ্যাকাউন্ট বানালেন জেসাস। রাতারাতি জুটিয়েও নিলেন লাখ দশেক ফলোয়ার। অনেকে বলবেন, এ তো ‘ফেক অ্যাকাউন্ট’। কিন্তু ‘ভুয়ো’-ই যদি হয়, তবে তাঁর নামের পাশে ব্লু টিক কেন?
৩/১২
কিছুদিন আগের কথা। ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে টুইটারকে কিনে নিয়েছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। কর্মীছাঁটাই থেকে শুরু করে সিইও বদল— টুইটারের হাতবদলের পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যেই রীতিমতো ওয়েবসাইটের খোলনলচে বদলে ফেলেছেন তিনি। চালু করেছিলেন মাত্র ৮ ডলার অর্থাৎ ৭০০ টাকার বিনিময়ে ব্লু-টিক প্রদানের পরিষেবা। এবার মাস্কের এই নীতিই সাড়ে-সর্বনাশ ডেকে আনল টুইটারের! ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরল একরাশ নিছক মজা ও বিভ্রান্তি…
৪/১২
হ্যাঁ, শুধু জেসাস ক্রাইস্টই নয়, অর্থের বিনিময়ে ব্লু-টিক পরিষেবা চালু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই টুইটারে খুলেছিল অজস্র ফেক অ্যাকাউন্ট। খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা তো বটেই, এ-তালিকায় রয়েছে নামিদামি আন্তর্জাতিক কোম্পানির নামে খোলা ভুয়ো অ্যাকাউন্টও। আর সেসব অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটও দেখার মতোই!
৫/১২
‘উই স্টিল ওয়াটার অ্যান্ড সেল ইট ব্যাক টু ইউ’। সম্প্রতি এই টুইট করা হয় বিখ্যাত ডেয়ারি সংস্থা ‘নেসলে’-র নামে খোলা একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে। বোদা বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘আপনার থেকে জল চুরি করেই, দুধ হিসাবে সেটাই আপনাকে বিক্রি করি’। মজার বিষয় হল, বাস্তব দুনিয়াতেও এই অভিযোগ উঠেছিল নেসলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ অবধি মামলা জিতেছিল নেসলেই।
৬/১২
নেসলের মতোই টুইটারের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ফাঁদে পড়েছে সফট ড্রিংক্স সংস্থা ‘কোকাকোলা’-ও। ব্লু-টিক সংযুক্ত কোকাকোলার একটি ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়, ‘বিশ্বের বৃহত্তম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদক আমরাই’। মজার বিষয় হল, বাস্তবেই একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে এ-কথা। এমনকি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার নিয়ে প্রচার চালালেও, সে-ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলেও অভিযোগ তুলেছিল জাতিসংঘ।
৭/১২
ফেক অ্যাকাউন্ট খোলে মার্কিন যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর নামেও। ঘোষণা করা হয়, ‘মানবাধিকারের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং ইজরায়েলকে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখছি আমরা।’ ভিয়েতনাম যুদ্ধই হোক কিংবা ভারত-পাক দ্বন্দ্ব— বার বার যুদ্ধ প্ররোচনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে গণতন্ত্রের বৃহত্তম প্রচারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ফেক অ্যাকাউন্টের নেপথ্যে ফের আলোচনায় উঠে এল সেই প্রসঙ্গ।
৮/১২
‘লকহিড মার্টিন’ এর পরই উল্লেখ করতে হয় জর্জ ডব্লু বুশের নাম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ভুয়ো অভিযোগকে খাড়া করে ইরাকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ। সে-যুদ্ধে প্রাণ হারান হাজার হাজার ইরাকি। সেই প্রসঙ্গে বুশের ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে দুঃখ প্রকাশ করে জানানো হয়, ‘বহুদিন হল ইরাকে গণহত্যা চালানো হয়নি!’
৯/১২
ফেক আইডির শিকার হয়েছে বিখ্যাত ওষুধ নির্মাণ সংস্থা ‘এলি লিলি অ্যান্ড কোম্পানি’। সেখান থেকে ঘোষণা করা হয়, ‘আগামীদিনে বিনামূল্যেই ইনসুলিন পাবেন আমাদের সমস্ত গ্রাহক’। মজার বিষয় হল, এই সংস্থা প্রায় আড়াইশো ডলার দাম নিয়ে থাকে ইনসুলিনের ভায়াল পিছু। প্রয়োজনীয় ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে এর আগেও একাধিকবার তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
১০/১২
টুইটারের এই নব্য-রসিকতা থেকে বাদ যাননি খোদ টুইটারের মালিক ইলন মাস্কও। তাঁর সংস্থা স্পেস-এক্স-এর ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়, ‘বয়সে নাসার এক চতুর্থাংশ হলেও, মার্কিন সরকারের থেকে হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছি আমরা। অবশ্য এর কারণ জিজ্ঞেস করবেন না…’ বলাই বাহুল্য এক্ষেত্রে নিশানা করা হয় পুঁজিবাদকেই।
১১/১২
মাস্ক জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার পর টুইটারকে বাকস্বাধীনতার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ করে তুলবেন তিনি। আদতে পুঁজিবাদকে হাতিয়ার করেই বৈশ্বিক রাজনীতিকে বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। এখন সেই পুঁজিবাদই যেন ফিরে এল বুম্যেরাং হয়ে। ফেক অ্যাকাউন্টের করা টুইটের সৌজন্য মুহূর্তের মধ্যেই শেয়ার বাজারে বড়ো পতন হয় ‘স্পেসএক্স’, ‘লকহিড মার্টিন’ কিংবা ‘এলি লিলি অ্যান্ড কোম্পানি’-র মতো সংস্থার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কয়েক কোটি টাকার ধাক্কা।
১২/১২
এই বাণিজ্যিক বিপর্যয়ের জন্য ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বহু সংস্থা। সেইসঙ্গে টুইটার ছেড়ে ‘কু’ কিংবা ‘ম্যাস্টোডন’-এর মতো মাইক্রো-ব্লগিং সাইটে অভিবাসন করছেন বহু ব্যবহারকারী। অন্যদিকে গতকাল অর্থের বিনিময়ে ব্লু-টিক প্রদান বন্ধ করা হলেও, আগামী সপ্তাহেই তা চালু করা হবে বলেই জানিয়েছেন টেসলা-অধিকর্তা। সব-মিলিয়ে এ যেন এক ডিজিটাল বিপর্যয়। সফল ব্যক্তিত্বরাও যে কখনও কখনও চরম অঘটন ঘটিয়ে বসেন, তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ দিলেন ইলন মাস্ক!