গল্পের মোগলি ছিল বাস্তবেও; ভারতের ‘বুনো শিশু’-র কথাই লিখেছেন রুডইয়ার্ড কিপলিং!

১৮৯৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর 'দি জাঙ্গল বুক' বইটি। আর সেই গল্প সংগ্রহের মধ্যে থাকা মোগলি চরিত্রটি অবাক করেছিল সারা পৃথিবীর মানুষকেই। জঙ্গলে একদল পশুপাখির ছত্রছায়ায় মানুষ হয়েছে সেই ছেলেটি। আর এই বই প্রকাশিত হওয়ার ঠিক পরের বছরেই ঘটে যায় একটি মৃত্যু। মৃতের নাম দিনা সানিচার।

আপাত দৃষ্টিতে এই দুই ঘটনার কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এখন যদি বলি, এই দিনা সানিচার আসলে লেখকের মোগলি চরিত্রটির অনুপ্রেরণা? হ্যাঁ, বেশিরভাগ গবেষক অন্তত তেমনটাই মনে করেন। তাই সেই বাস্তব মোগলির জীবনের খানিকটা জেনে নেওয়া যাক।

সালটা ১৮৬৭। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার একটি জঙ্গলে অদ্ভুত জানোয়ারের সন্ধান পান গ্রামবাসীরা। আর তার পিছনে ধাওয়া করেই পৌঁছে যান একটি গুহার কাছে। কিন্তু ধোঁয়ার সাহায্যে সেই গুহা থেকে যখন প্রাণীটিকে বের করে আনা হল, তখন অবাক হলেন প্রত্যেকেই। কারণ প্রাণীটা অন্য কিছু নয়, একটি মানুষ। বছর ছয়েকের একটি বালক। অথচ সভ্য জীবনের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগই নেই। ছোট থেকেই সে মানুষ হয়েছে এই জঙ্গলে একদল নেকড়ের মধ্যে।

ছেলেটিকে যখন গ্রামবাসীরা ধরতে এসেছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই বাধা দিয়েছিল সেই নেকড়ের দল। কিন্তু তাদের প্রত্যেককেই হত্যা করে ছেলেটিকে নিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আগ্রার সিকান্দ্রা মিশন এতিমখানার একটি অনাথ আশ্রমে। সেখানেই তার নাম রাখা হয় সানিচার। উর্দু ভাষায় যার অর্থ শনিবার। কারণ এই দিনেই তাকে আশ্রমে নিয়ে আসা হয়।

এরপর সেই অনাথ আশ্রমই হয়ে ওঠে তার বাসস্থান। কিন্তু সেখানেও কারোর সঙ্গে মেলামেশা করত না সেই ছেলেটি। কেবল একটি বন্ধু ছিল। তাকেও এক জঙ্গল থেকেই উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। কিন্তু সেই ছেলেটি স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল। মানতে পারেনি দিনা। তাকে মানুষের ভাষা শেখানো যায়নি। এমনকি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কাঁচা মাংস খেতেই আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। সেইসঙ্গে মাংসের হাড় ঘষে দাঁতে শান দিত সে। পোশাক পড়াতেও বেশ বেগ পেতে হত। দীর্ঘ ২৮ বছরের চেষ্টাতেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়নি দিনাকে।

এই পৃথিবীতে অবশ্য এমন ঘটনার কথা অনেকগুলো জানা যায়। অনেকেই ছোটোবেলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁরা বড় হয়েছেন জঙ্গলের মধ্যে। ইংরেজিতে তাঁদের বলা হয় 'ফেরাল চাইল্ড'। বাংলায় কী বলা যায়? 'বুনো শিশু'? অবশ্য উত্তরপ্রদেশের সেই বালকের সঙ্গে মোগলি চরিত্রটির কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা অবশ্য লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং কোথাও উল্লেখ করেননি। কিন্তু যে লেখকের জন্ম এই দেশে, জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন এখানে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে, তাঁর গল্পের অনুপ্রেরণা তো এদেশেই লুকিয়ে থাকবে। তাই গবেষকরাও মনে করেন দিনা সানিচারের কথা জানতে পেরেই এই চরিত্রটিকে গড়ে তোলেন লেখক। আর দিনা নিজে সভ্য জীবনে ফিরে আসতে না পারলেও সভ্য মানুষ আপন করে নিয়েছে সেই বন্য শিশুকে। অবশ্য সেটা তো গল্পের চরিত্র। বাস্তবের মোগলি কি আদৌ যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছিল এই সমাজ থেকে?

আরও পড়ুন
চম্বলের কুখ্যাত গব্বর সিং-কে দেখেই তৈরি হয়েছিল ‘শোলে’র গব্বর চরিত্রটি

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More