এই তো কিছুদিন আগেই মানুষটা ঘুরে এলেন হাসপাতাল থেকে। বুকের মধ্যে বসানো হল পেসমেকার। চিকিৎসক বলেছেন তিনমাস পর আবার চেক-আপ করালেই হবে। কিন্তু এর মধ্যেই শুরু হল বুকে যন্ত্রণা। সব দেখে চিকিৎসক বুঝলেন, তিনি পেসমেকারের যে ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক করে রেখেছিলেন, যন্ত্র চলছে তার থেকে অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গে। তাহলে কি যান্ত্রিক কোনো গোলযোগ? নাকি হ্যাক করা হয়েছে রোগীর পেসমেকারটিও? কিন্তু পেসমেকার আবার হ্যাক করা যায় নাকি? শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এখন যেকোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হ্যাক করাই সম্ভব।
শুধুই ডিজিটাল পেসমেকার নয়, ডাক্তারি ব্যবস্থায় ইন্টারনেট অফ থিংস বা আইওটি রীতিমতো যুগান্তর এনে দিয়েছে। ডিজিটাল যন্ত্রের সাহায্যেই এখন পরিমাপ করা যায় রক্তের সুগার লেভেল থেকে শুরু করে ব্লাড প্রেসার বা পালস রেট। এমনকি এক্স-রে, ইসিজির মতো কাজও করা যায় ডিজিটালি। আর এই সমস্ত তথ্য এক জায়গায় জড়ো করার কাজটাও হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। একসময় পেসমেকারের মতো যন্ত্রের ফ্রিকোয়েন্সি বদলাতে নতুন করে সার্জারি করতে হত। আজও আমাদের দেশে মূলত এই ধরণের অ্যানালগ পেসমেকার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে এসে গিয়েছে ডিজিটাল পেসমেকার। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই কয়েক সেকেন্ডে তার ফ্রিকোয়েন্সি বদলে ফেলা সম্ভব। আর সমস্যার শুরু সেখান থেকেই।
অবশ্য ম্যাকাফির মতো সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা বলছে, পেসমেকার হ্যাক করা একেবারেই সহজ কাজ নয়। কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে তা করা সম্ভবও নয়। এর জন্য রোগীর একেবারে কাছে আসা প্রয়োজন। অন্তত যতটুকু দূরত্বের মধ্যে ব্লুটুথ নেটওয়ার্ক কাজ করে। তবে রোগী তো নিশ্চই সবসময় ঘরে বসে থাকবেন না। ফলে তা একেবারে অসম্ভবও নয়। আগের বছরই নিউ ইয়র্কের একটি নামকরা হাসপাতালের সমস্ত ইনসুলিন পাম্প হ্যাক করে ফেলেছিলেন দুষ্কৃতিরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কারোর প্রাণ সংশয় হতে দেননি চিকিৎসকরা। কিন্তু সাইবার হ্যাকিং-এর কারণে কারোর মৃত্যু হলেও হ্যাকারকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত করা সহজ নয় বলেই মনে করছেন আমেরিকার আইনজীবীরা। অবস্থা এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে, ২০১২ সালে আমেরিকার চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আবারও পুরনো নিয়ম মেনে অ্যানালগ পেসমেকার ব্যবহার করবেন তাঁরা।
অবশ্য আইনজীবীরা বলছেন, হ্যাকারদের সাধারণত কারোর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যও থাকে না। তাঁরা কিছু অর্থ দাবি করেন। আর এক্ষেত্রে রোগীর গোপন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। তাই পেসমেকারের মতো জীবনদায়ী যন্ত্রের তুলনায় স্মার্ট-ওয়াচ হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবং এরকম ঘটনা আখচজার ঘটছে। বরং পেসমেকার হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে একেবারেই নগণ্য পর্যায়ে। অবশ্য সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে বিষয়টি রীতিমতো গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ একটি জীবনও তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গত ১০ বছরে এই সিকিউরিটি পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কোনোদিনই এমন কোনো প্রযুক্তি অর্জন করা সম্ভব নয়, যা হ্যাক করা অসম্ভব। অতএব ডিজিটাল যন্ত্রপাতি বা ইন্টারনেট অফ থিংস যেমন বিজ্ঞানের আশীর্বাদ, তেমনই দুশ্চিন্তারও কারণ।
আরও পড়ুন
হ্যাকার-হামলায় প্রশ্নের মুখে লিংকডইন, নিলামে ৫০ কোটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হ্যাকারদের নতুন হাতিয়ার পর্নোগ্রাফি, গোপন তথ্য ফাঁস করেই চলছে দেদার ব্ল্যাকমেল