‘পানি’ কথাটি জলেরই সমার্থক শব্দ। তবে কলকাতায় সাধারণত কথ্য ভাষায় ‘পানি’ কথাটির ব্যবহার হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে পূর্ববঙ্গে গেলে স্থানীয় মুখে ‘জল’ শোনা খানিক বিরল ব্যাপার। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে ‘পানি’ কথাটি ব্যবহৃত হয় ‘বৃষ্টি’ বোঝাতে। ইংরাজি ভাষাতেও লক্ষ করা যায় এই একই ধরনের বৈচিত্র। এবার ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত উপভাষা এবং সেই-সব উপভাষার (Dialects) বিভিন্ন বৈচিত্রময় শব্দ নিয়েই গড়ে উঠল আস্ত সংগ্রহশালা। নেপথ্যে লিডস বিশ্ববিদ্যালয় (Leeds University)।
‘ইই বাই গাম’। প্রচলিত এই আইরিশ লোকসঙ্গীতটি শুনেছেন অনেকেই। সুর এবং তালের জন্য এই গানটি যতটা আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই আকর্ষণীয় এই গানের শব্দবন্ধগুলিও। ইংরাজি ভাষায় হলেও, এই গানে ব্যবহৃত অধিকাংশ শব্দই খুঁজে পাওয়া যাবে না ইংরাজি ডিকশনারিতে। কারণ এইসব শব্দবন্ধ বিশেষ বিশেষ স্থানীয় উপভাষার অঙ্গ। জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি এই গানের লাইনের অনুকরণেই ইংরাজি উপভাষার সদ্য নির্মিত সংগ্রহশালাটির নামকরণ করেছেন লিডসের ভাষাবিদরা।
তাঁদের কথায়, উপভাষা মানে শুধু উচ্চারণের তারতম্যই নয়, বিভিন্ন উপভাষায় বদলে যায় নির্দিষ্ট কোনো শব্দের ব্যাকরণগত ব্যবহার, তার অর্থ এবং বানান। কখনও আবার কোনো কোনো উপভাষায় জন্ম নেয় নতুন নতুন শব্দও। যেমন, ব্রিটেনের পশ্চিমাংশে বহুলব্যবহৃত একটি শব্দ হল ‘উম্মাল’ (Wommal)। প্রকৃতপক্ষে যার অর্থ ‘কুকুর’। ইংরাজি উপভাষার এইধরনের অজস্র শব্দ বন্ধ এবং তাদের উচ্চারণের রেকর্ড নিয়েই গড়ে উঠেছে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডিজিটাল উপভাষা সংগ্রহশালা ‘ইই বাই গাম’। সেখানে এমনও বহু ইংরাজি উপভাষা জায়গা পেয়েছে, আজকের দিনে যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই আর।
আসলে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে এই উপভাষা সংরক্ষণ এবং সংগ্রহের এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল প্রায় সাত দশক আগে। দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক উপভাষার বক্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বাচনভঙ্গি এবং তাঁদের ব্যবহৃত শব্দ রেকর্ড আকারে সংগ্রহ করেছিলেন লিডসের ভাষাবিদরা। প্রায় এক দশক চলার পর, ১৯৬০ সালে বন্ধ হয়ে যায় তাঁদের এই প্রকল্প। তবে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এতদিন সংরক্ষিত ছিল সেই সময়ের রেকর্ড করা টেপগুলি। সেগুলিকেই ডিজিটাইজ করে তৈরি করা হয়েছে এই সংগ্রহশালা। লিডসের গবেষকদের পাশে ‘ইন ইওর ওয়ার্ড’-খ্যাত এই প্রকল্পে যৌথভাবে জড়িয়ে ছিল যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল লটারি হেরিটেজ ফান্ডও।
তবে এখানেই শেষ নয়। গবেষকদের বিশ্বাস, এই বিপুল সংগ্রহের বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে ইংরাজি ভাষার বহু আঞ্চলিক আকার, বর্ণময় উপভাষা। আগামীদিনে সেগুলি সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার অভিযান চালাবেন গবেষকরা। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষও তাঁদের ব্যবহৃত ডায়েলেক্ট বা উপভাষা, সেই উপভাষার নিজস্ব শব্দ এবং বাক্যাংশ রেকর্ড করে পাঠাতে পারেন ভার্চুয়াল এই জাদুঘরে…
Powered by Froala Editor