চিত্রপ্রদর্শনীর হাত ধরে লকডাউনেও ‘স্বপ্ন’ দেখাচ্ছেন বাংলার তরুণরা

“লকডাউনের মধ্যে বর্তমানে সমস্ত গ্যালারিই বন্ধ। সেই কারণে গ্যালারি এগজিবিশন করার সুযোগ নেই। আর মহামারীর মধ্যে স্ট্রিট এগজিবিশন করাও সম্ভব নয়। সেই কারণেই অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নেওয়া।”

বলছিলেন ‘ছবিওয়ালা’-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৌরভ মিত্র। একদল তরুণশিল্পীর এই সংগঠনই এবার মহামারীর পরিস্থিতিতে উপহার দিল আন্তর্জাতিক মানের ভার্চুয়াল চিত্রপ্রদর্শনী। প্রদর্শিত হল দুই বাংলার শিল্পীদের ছাড়াও ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং সৌদি আরবের প্রবাসী বাঙালিদের চিত্রকলা। তৌসিফ হক, রৌদ্র মিত্র, অমিত মণ্ডল, চিন্ময় মুখোপাধ্যায়, শুভ্রজ্যোতি ভট্টাচার্য-সহ সব মিলিয়ে অংশ নিয়েছিলেন মোট ৩৭ জন শিল্পী। প্রত্যেক শিল্পীরই একটি করে ছবিকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে এই চিত্রপ্রদর্শনীতে।

সৌরভ মিত্র

 

২০১৯ সাল। আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগে শিল্পী সৌরভ মিত্র এবং বিপ্লব ধরের যৌথ উদ্যোগেই পথচলা শুরু হয়েছিল ছবিওয়ালার। বিপ্লব ধর জানালেন, “আমরা কেউ-ই প্রথাগত শিল্পী নই। অর্থাৎ, আমরা সকলেই স্বশিক্ষিত। ডিগ্রি পাওয়া শিল্পীরা, যারা আর্ট কলেজের একটা প্রপার এডুকেশনের মধ্যে দিয়ে এসেছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে উঁচুনিচু ব্যাপার থাকে একটা। তবে স্বশিক্ষিত শিল্পীরাও যে কাজ করতে পারেন, সেই জায়গাটা থেকেই তৈরি হয়েছিল ছবিওয়ালা।” পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বড়ো হয়েছে সংগঠন। বা বলা ভালো বাংলার তরুণ স্বশিক্ষিত শিল্পীদের একজোট করতেই সফল হয়েছে ছবিওয়ালা। সেখানে যেমন কলকাতার শিল্পীরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন শহরতলি কিংবা প্রান্তিক অঞ্চলের চিত্রশিল্পীরাও। নীরবেই তাঁরা অংশ হয়ে উঠেছেন এক অন্য বিপ্লবের।

আরও পড়ুন
৪১ লক্ষ নতুন বিলিয়নিয়র, অতিমারীতেও বৈপরীত্যের ছবি বিশ্বজুড়ে

মৃন্ময় দাস

 

আরও পড়ুন
প্রথম চলচ্চিত্রের আগেই বানিয়ে ফেলেছিলেন পঞ্চাশেরও বেশি ছবি!

রৌদ্র মিত্র

 

আরও পড়ুন
লিভারপুল সমুদ্রসৈকতে মৎস্যকন্যার কঙ্কাল! সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ছবি

গত ২৮ জুন ছিল ছবিওয়ালার জন্মদিন। আর সেই উপলক্ষেই আয়োজন বিশেষ এই অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীর। শিরোনাম ছিল ‘স্বপ্ন’। সৌরভ মিত্রের কথায়, “আসলে ছবিওয়ালা আমাদের কাছে একটা স্বপ্নের মতোই। শুধুমাত্র নিষ্ঠা দিয়েই কাজ করে একটা সময় আমরা নিজেরা একটা জায়গা করে নেব, সেটা ভেবেই তো পথ চলা। তো স্বপ্নের জন্মদিন বলেই বিষয় হিসাবে স্বপ্নকে বেছে নেওয়া।” পাশাপাশি তাঁর কথায় ফুটে উঠল মহামারীর কথাও, “প্রচণ্ড একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি আমরা। চারিদিকে মৃত্যুমিছিল, এর মধ্যে স্বপ্নটাকেই তো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হবে আমাদের।”

বিপ্লব ধর

 

এর আগেও একাধিকবার কলকাতার বুকে স্ট্রিট আর্ট ও গ্যালারি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন ছবিওয়ালার শিল্পীরা। মহামারী সেই উৎসবের মেজাজে যেন জল ঢেলে দিয়েছে। অনলাইনে প্রদর্শনীর আয়োজন হলেও জড়ো হয়ে শিল্প নিয়ে মেতে ওঠার আমেজটাই যেন নেই। তবে উদ্যম হারাননি কেউই। ভার্চুয়াল হলেও এতটুকু খামতি থাকেনি বৈচিত্রেও। মাধ্যম হিসাবে যেমন জল রং, তেল রং, অ্যাক্রেলিং রয়েছে; তেমনই রয়েছে ডিজিটাল পেন্টিংও। সেইসঙ্গে বৈচিত্র রয়েছে ধারাতেও। রিয়ালিজম, সারিয়ালিজম কিংবা অ্যাবস্ট্রাক্ট— বাদ নেই কিছুই। 

রাহুল দাশগুপ্ত (ইংল্যান্ড)

 

কঠিনাবস্থা আর প্রতিবন্ধকতা যে শিল্পের কণ্ঠরোধ করতে পারে না, সেই কথাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাংলার তরুণ শিল্পীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার চিরাচরিত ছন্দে ফিরবে ‘ছবিওয়ালা’, জানালেন উদ্যোক্তারা। কলকাতা তো বটেই, সেইসঙ্গে জেলার জেলায় হবে চিত্র প্রদর্শনী। সেই সুদিনের অপেক্ষাতেই এখন প্রহর গুনছেন তাঁরা…

Powered by Froala Editor