দিয়েগো রিভেরা (Diego Rivera) ও ফ্রিডা কাহলো (Frida Kahlo)— এই দুই কিংবদন্তিকে ছাড়া অসম্পূর্ণ মেক্সিকোর ‘শিল্প বিল্পব’-এর ইতিহাস। মেক্সিকান শিল্পমহলে কিউবিজমের পথিকৃৎও বলা চলে রিভেরাকে। শুধুমাত্র শিল্পসৃষ্টিই নয়, শিল্প সংরক্ষণ এবং শিল্পের পরিমণ্ডল তৈরি করার পিছনেও অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে তাঁর। রিভেরা চাইতেন এমন এক স্বপ্নরাজ্য তৈরি করতে যেখানে আট থেকে আশি বছর বয়সি সমস্ত শিল্প অনুরাগীরা বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, শিল্প এবং ঐতিহ্যের অধ্যয়ন করতে পারবেন। কিংবদন্তি শিল্পী মৃত্যুর ৬৫ বছর পর বাস্তবের রূপ পেল সেই ইউটোপিয়া— সিটি অফ আর্টস (City Of Arts)।
হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই শিল্পের শহর। হিস্ট্রি অফ মেক্সিকো, দ্য অ্যালগরি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যান অ্যাট দ্য ক্রসরোডস-এর মতো ম্যুরাল তৈরির পাশাপাশি নিজের কল্পনায় এমনই এক ইউটোপিয়ার জাল বুনেছিলেন দিয়েগো রিভেরা।
সেটা ১৯৪১ সাল। সান ফ্রান্সিসকো সফর সেরে সদ্য মেক্সিকোয় ফিরেছেন রিভেরা। হাত লাগিয়েছেন আনাহুয়াকাল্লি মিউজিয়াম নির্মাণে। সেইসময়ই তাঁর মাথায় আসে শিল্প শহর তৈরির পরিকল্পনা। যা হবে আধুনিক শিল্প এবং প্রাক-কলোম্বিয়ান নন্দনতত্ত্বের মধ্যবর্তী সেতু। আর তার দ্বার খোলা থাকবে সমস্ত সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের জন্য। সেই শহর তৈরির জন্য মেক্সিকো সিটিতে শহরতলিতে কিনেছিলেন জমি। এমনকি সেই স্বপ্নের শহরকে বাস্তবায়িত করার কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই কাজ অসমাপ্ত রেখেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাঁকে।
রিভেরার মৃত্যুর ৬৫ বছর পর এবার জনসাধারণের জন্য খুলে গেল সেই জাদুঘর। মেক্সিকোর রাজধানীর দক্ষিণে ৬৪ হাজার বর্গফুটের এই কমপ্লেক্স আক্ষরিক অর্থেই যেন মিনি শিল্প-শহর। আগ্নেয়শিলা দিয়ে নির্মিত জাদুঘরটির আকার অনেকটা অ্যাজটেক-মন্দিরের আদলে। সেখানেই সংগৃহীত হয়েছে রিভেরার ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রায় ৫০ হাজার প্রাক-হিস্পানিক নিদর্শন। পাশাপাশি তাঁর, ফ্রিডা কাহলো এবং অন্যান্য মেক্সিকান শিল্পীদের তৈরি অজস্র শিল্পকর্মও জায়গা পেয়েছে সেখানে।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দৈত্যাকার গ্লোব তৈরি জেরুজালেমের শিল্পীর
এসবের বাইরেও মূল ভবনটিকে ঘিরে থাকছে ১৩টি অতিরিক্ত পরিকাঠামো। যার মধ্যে রয়েছে আর্ট গ্যালারি, ওপেন পারফর্মেন্স স্পেস, শিল্প কর্মশালা ইত্যাদি। স্কুল থেকে শুরু করে অ্যাকাডেমি স্তরের সমস্ত শিল্পীরাই যেখানে মেলে ধরতে পারবেন নিজেদের স্বতন্ত্র ভাষাকে। গত বছর অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছিল এই শিল্প-শহরের। আয়োজিত হয়েছিল বিশেষ কনসার্ট এবং মৃৎশিল্পের প্রদর্শনী। তবে অভ্যন্তরীণ সজ্জা অসম্পূর্ণ থাকায়, নিষিদ্ধ ছিল সাধারণ মানুষের অনুপ্রবেশ। এবার সকলের জন্যই খুলে গেলে ঐতিহাসিক এই ‘শহর’-এর দরজা…
আরও পড়ুন
প্রযুক্তির হাত ধরেই প্রাণ ফিরছে তামা-পিতল শিল্পে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শাড়িতেও অনন্যা ফ্রিডা কাহলো, ভারতীয় সাজে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন মেক্সিকান শিল্পী