কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনাকে (Diego Maradona) আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু অনেকেই জানেন না, সুদের হারের তত্ত্বের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে মারাদোনার নাম। তাঁর করা দুটি গোলের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন গভর্নর মারভিন কিং (Mervyn King) একবার মারাদোনা তত্ত্বের (Maradona Theory) সঙ্গে মূল সুদের হারের (Key Interest Rates) তুলনা টেনেছিলেন।
১৯৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সেই ম্যাচে মারাদোনার দুটি গোলের কথা উল্লেখ করেন মারভিন কিং। মেক্সিকো সিটিতে ২২ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে মারাদোনার প্রথম গোলটি সেই 'হ্যান্ড অফ গড'। রেফারির চোখকে ফাঁকি দিয়ে যে বলটি ইংল্যান্ডের জালে জড়িয়ে যায়, তা আসলে মারাদোনার মাথা ছোঁয়নি, হাতে লেগেছিল। এর পর ঘটনাটি নিয়ে তুমুল তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু ৮৬ বিশ্বকাপের প্রায় দু-দশক পর মারভিন কিং তাঁর বক্তৃতায় বলেন, গোল দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কিংয়ের পুরনো 'রহস্য এবং রহস্যময়' (Mystery and Mystique) পদ্ধতির সংক্ষিপ্তসার। মারাদোনার এই গোল দুটিকে মারভিন 'অপ্রত্যাশিত, সময়-অসঙ্গত এবং নিয়মের বিরুদ্ধে' এবং 'এটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি ভাগ্যবান' বলেছিলেন।
সেই ম্যাচে মারাদোনা প্রায় ৬০ গজ দৌড়ে পাঁচ জন ব্রিটিশ ফুটবলারকে কাটিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। মারভিন উল্লেখ করেছেন, মারাদোনা কার্যত সোজা লাইনে দৌড়েছিলেন। ভাবুন একবার, কীভাবে আপনি একটি সরল রেখায় দৌড়ে পাঁচজন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করতে পারেন? ইংলিশ ডিফেন্ডাররা ভেবেছিলেন, মারাদোনা বাম অথবা ডানদিকে সরে যাবেন। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণিত করে তিনি সোজাসুজি দৌড় লাগান। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কাররাও প্রায়শই বাজারকে অবাক করার জন্য মূল সুদের হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমনটা করে থাকে। কিংয়ের মতে, সেই ম্যাচে মারাদোনার দ্বিতীয় গোলটি সুদের হারের আধুনিক তত্ত্বে (Theory of Interest rates) প্রত্যাশার শক্তির (Power of Expectations) উদাহরণ। বাজারের সুদের হার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রত্যাশার সঙ্গে সংযুক্ত। অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে তারা মূল সুদের হারের বিষয়ে কোনও বড় পদক্ষেপ না নিয়েই অর্থনীতির পথকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে সরল রেখায় চলতে থাকে। আর্থিক বাজারে কখনো কখনো সুদের হার বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। এই হার একই থাকার আশা না করাই ব্যক্তিগত ব্যয়কে স্থিতিশীল করার জন্য যথেষ্ট।
৮৬ বিশ্বকাপের শেষ চারে তাঁর করা গোলগুলিকে অর্থনীতিবিদরা ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবেই। দুটি গোলই তাঁদের কাছে আইকনিক। ২০০৫ সালে, ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর লর্ড মারভিন কিং মারাদোনার করা গোল দুটিকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে দেখিয়েছিলেন, কীভাবে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত ধাক্কা সামলে নিখুঁতভাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। একজন পর্যবেক্ষকের কাছে, তা তিনি সাংবাদিক হোন কিংবা অর্থনীতিবিদ, সুদের হারের পরিবর্তনগুলি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে কিছুটা হলেও সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রায় এলোমেলো আচরণ করছে বলে মনে হবে। কিন্তু সেই অনুমান আদতে মিথ্যা। মানুষ যদি ভেবে নেয়, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক যথেচ্ছ আচরণ করবে, তাহলে পরিবার এবং সংস্থাগুলির আচরণ পরিবর্তন হবে। সেক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি আর স্থিতিশীল থাকবে না। একেই মারভিন কিং বলেছিলেন 'সুদের হারের মারাদোনা তত্ত্ব'।
আরও পড়ুন
যিশু নন, এই গির্জায় পূজিত হন স্বয়ং মারাদোনা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মারাদোনা ও মেসি— প্রশিক্ষণ দিয়েছেন দুই কিংবদন্তিকেই, কে তিনি?