বাংলার সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক তিনি। হিমু হোক বা মিসির আলী, কিংবা অন্য কোনো চরিত্র – হুমায়ূনের সৃষ্টিকে আপন করে নিয়েছেন আপামর বাঙালি। শুধু কী উপন্যাস! ছোটগল্প, নাটক ইত্যাদিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। এসব সাফল্য প্রভূত সম্মানও দিয়েছে তাঁকে। পাশাপাশি, তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক মিথও। এমনই একটি মিথ হল, লেখালিখি করে উপার্জিত টাকায় আস্ত একটি দ্বীপ কিনেছিলেন ‘সম্রাট’ হুমায়ূন আহমেদ।
এ-নিয়ে আলোচনা, জল্পনারও কমতি ছিল না। একজন লেখক কতটা বড়লোক হলে আস্ত একটা দ্বীপ কিনতে পারেন! দ্বীপ নিয়ে করবেনই বা কী তিনি! তবে জল্পনার খুব বেশি সুযোগও ছিল না। দূরের মানুষেরা দ্বীপ কেনার খবরে বিস্মিত হলেও, কাছের মানুষেরা ঠিকই জানতেন প্রকৃত তথ্য। কিন্তু কি সেটি?
না, হুমায়ূন আহমেদ কোনো দ্বীপ কেনেননি। তবে একটি দ্বীপের প্রচুর জমি কিনেছিলেন। এবং নিজের বসবাসের জন্য তৈরি করেছিলেন একটি রিসোর্ট। চট্টগ্রামের কাছেই রয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। সেই দ্বীপেরই জমি কিনেছিলেন হুমায়ূন, ১৯৯৩ সালে। ওখানকার বাসিন্দা জনৈকা জোলেখা খাতুনের কাছ থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় ২২ শতক জমি কেনেন তিনি। পরের বছরই ওখানে নির্মাণ করেন একটি বাড়ি। নাম দেন ‘সমুদ্র বিলাস’। বাড়ি না বলে রিসোর্ট বলাই ভালো। হুমায়ূন আহমেদের সোজন্যেই ক্রমশ পরিচিতি লাভ করে এই দ্বীপটি। এবং মিথ ছড়িয়ে পড়ে, আস্ত একটি দ্বীপ কিনেছেন বাংলাদেশের এই লেখক।
আজও পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে গিয়ে ভিড় জমান হুমায়ূনের বাড়ির সামনে। হুমায়ূনের অকালমৃত্যুর পর, বেশ কয়েকটি কটেজ নির্মাণ করা হয় দ্বীপটিতে। নাম দেওয়া হয় হুমায়ূনের উপন্যাসগুলির নামেই। তৈরি হয় রেস্তোরাঁও।
দ্বীপ কিনুন বা না কিনুন, একটি দ্বীপের জমি কিনে সেখানে রিসোর্ট নির্মাণ করছেন একজন বাঙালি লেখক – এও কম কথা নয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন – ‘এবার কবিতা লিখে আমি একটা রাজপ্রাসাদ বানাবো / এবার কবিতা লিখে আমি চাই পন্টিয়াক গাড়ি।’ সেটা হয়ে না উঠলেও, ‘সম্রাট’ হুমায়ূন কিন্তু একটি দ্বীপের অনেকটা অংশ কিনে নিয়েছিলেন লেখক হিসেবে উপার্জিত টাকাতেই।
তথ্য ঋণ – প্রথম আলো