দুর্গের নিচে ৩ মিটারের নরকঙ্কাল, বাস্তবেই অস্তিত্ব ছিল দৈত্যাকার মানুষদের?

২০১৫ সালের মার্চ মাসের কথা। বুলগেরিয়ার ভার্নায় প্রাচীন শহর ওডেসোসের দুর্গে খননকার্য চালাচ্ছিলেন ইউরোপীয় প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেই সময় ওডেসোস দুর্গের প্রাচীরের নিচ থেকে উদ্ধার হয় প্রকাণ্ড এক ব্যক্তির নরকঙ্কাল। ভার্না মিউজিয়াম অফ আর্কিওলজি (Verna Museum Of Archaeology) থেকে এই কঙ্কাল আবিষ্কারের কথা জানানো হলেও প্রকাশ্যে আনা হয়নি তার আসল উচ্চতা। আর সেখান থেকেই শুরু হয় জল্পনা। আদৌ কি এমন দৈত্যাকার মানুষের অস্তিত্ব ছিল তৎকালীন ইউরোপে (Europe)? 

হ্যাঁ, খননকার্য পরিচালনকারী দলের নেতৃত্বে থাকা গবেষক ডঃ ভ্যালেরি ইয়োটভের দাবি এমনটাই। তাঁর কথায়, এই প্রকাণ্ড দৈত্যাকার মানুষটি আদতে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘আটলান্টিক জায়েন্ট’ (Atlantic Giants) প্রজাতির সদস্য। আনুমানিক চতুর্থ কংবা পঞ্চম শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন এই ব্যক্তি, এমনটাই অনুমান তাঁর। ওডেসোসের দুর্গ নির্মাণ করার সময়ই মৃত্যু হয় এই ব্যক্তির। তাই দুর্গের প্রাচীরের নিচে, প্রায় ৩ মিটার গভীরতায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। 

উল্লেখ্য, শুধু এই দৈত্যাকার মানুষটির কঙ্কালই নয়, ওডেসোসের এই ধ্বংসস্তূপ থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল বেশ কিছু মাটির পাত্র, প্রাচীনকালের হাতকল এবং ধাতব কুঠারও। এইসব প্রত্নসামগ্রী পরবর্তীতে প্রদর্শনীতে রাখা হলেও, প্রকাশ্যে আনা হয়নি নরকঙ্কালটি। এমনকি তার আসল উচ্চতা সম্পর্কেও স্পষ্টভাবে কোনো তথ্য জানাননি সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ভার্না মিউজিয়াম। কেবলমাত্র প্রকাশিত করা হয়েছিল কঙ্কালটির ছবি। তা থেকে অনেকেরই ধারণা, লম্বায় অন্তত ৩ মিটার ছিলেন এই প্রাচীন মানব। 

ইয়োটভের দাবি অনুযায়ী, কোমরে হাত রাখা অবস্থায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল এই ব্যক্তিকে। এবং সমাধিস্থলের পূর্বদিকে ছিল তাঁর মাথা। ইয়োটভের কথা অনুযায়ী, যা ধর্মীয় সমাধির প্রমাণ। 

তবে এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন আবিষ্কার নয়। ২০১২ সালে রোমানিয়ার সান্তা মেরের কাছেও সন্ধান মিলেছিল এমন এক প্রকাণ্ড কঙ্কালের। গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এই কঙ্কালের দৈর্ঘ্যও ছিল প্রায় আড়াই মিটার। এক্ষেত্রেও প্রকাশ্যে আনা হয়নি কঙ্কালটিকে। কেবলমাত্র তার ছবি প্রকাশ করেছিল রোমানিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ। ‘গোলায়াথ’ নামে খ্যাত এই প্রাচীন যোদ্ধা বুলগেরিয়ার দৈত্যাকার মানবের পূর্বপুরুষ ছিলেন, এমনটাও দাবি করেছেন অনেকে। কারোর মতে, ইউরোপের উত্থানের পিছনে দায়ী ছিল এইসকল দৈত্যাকার মানুষরাই। 

তবে বাস্তবে ‘গোলায়াথ’-এর অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্কের রেশ পড়েনি আজও। এমনকি এই ছবিগুলির সত্যতা নিয়ে মামলা উঠেছিল আদালতেও। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানায়, ছবিগুলো আদতে ‘হোক্স’ অর্থাৎ, প্রাচীন লোককথাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিকল্পনা করে কম্পিউটারে এই ছবিগুলি তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিমভাবে। তবে তারপরেও গবেষকদের একাংশ পৌরাণিক দৈত্যদের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁদের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আজও…

Powered by Froala Editor