মানব সভ্যতার ইতিহাস বড়োই জটিল। যত দিন যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন তথ্য আমাদের সামনে চলে আসছে। স্কুল জীবনে পড়া ইতিহাসের সঙ্গে তা অনেকটাই আলাদা। সম্প্রতি ভারতে পাওয়া গেল ৮০ হাজার বছর আগে মানুষের বসবাসের অস্তিত্ব। আর তাকে ঘিরেই আবারও গবেষকদের মধ্যে তৈরি হল নানা প্রশ্ন।
মধ্যপ্রদেশের শোন নদীর উপত্যকার ধাবা ট্রেঞ্চে এই আর্কিওলজিকাল সাইটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মূলত প্রাচীনকালের পাথরের হাতিয়ার ও অন্যান্য প্রত্নতত্ত্ব পাওয়া গেছে। যেটা উল্লেখযোগ্য, সেটা হল এর সময়। ধাবা থেকে প্রাপ্ত পাথরের বস্তুগুলির বয়স আনুমানিক ৮০ হাজার বছর হবে। মানে, সেই সময়ের আশেপাশে থেকেই এখানে আদিম মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল। এরা তখনও লোহা বা তামার ব্যবহার জানত না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
দুর্গম অঞ্চলে ভেঙে পড়ল বিমান, মৃত সহযাত্রীদের মাংস খেয়ে ৭৩ দিন কাটালেন জীবিতরা
তবে এই সময়ের একটি অন্য দিকও ভেবে দেখছেন ঐতিহাসিকরা। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, ওই সময়ই পৃথিবীতে একটি অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। ছোটোখাটো নয়, বলা ভালো সুপার-ভলকানিক ইরাপশন। প্রাচীন ইতিহাসে যেটা ‘তোবা অগ্ন্যুৎপাত’ নামে পরিচিত। উৎসস্থল সুমাত্রা। গবেষকদের মতে, শেষ ২ মিলিয়ন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো, শক্তিশালী ও ভয়ংকর ছিল এই ভলক্যানো। পৃথিবীর নানা অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে যায়। অনেক বন স্রেফ ছাই হয়ে যায়। মারা যায় অনেক মানুষ। তবে তার থেকেও বেশি যেটা হয়েছিল, সেটা হল ভলক্যানিক উইন্টার। এরপরেই হঠাৎ তাপমাত্রা নেমে যায় অনেকটা। আর এই ঘটনাই আদিম মানুষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁধা পড়ে তারা।
গবেষক মাইকেল পেত্রাগ্লিয়ার মতে, আফ্রিকার থেকে আদিম মানুষ অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। ৮০ হাজার বছর আগে সেই মাইগ্রেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সাময়িক। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ধাবা থেকে যা নিদর্শন পাওয়া গেছে, সেটা অন্য কথা বলে। বিভিন্ন স্তরে যে পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে, তা থেকে এটা ধারণা করা যায় যে ওই অগ্ন্যুৎপাতের আগে থেকেই মানুষ ওখানে ছিল। পরেও, ওই প্রচণ্ড ঠান্ডার সময়ও ওখানে বেঁচেছিল। অর্থাৎ, আফ্রিকা থেকে আগেই আদিম হোমো সেপিয়েন্সরা এখানে চলে এসেছিল। কিন্তু তোবার ওই প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ থেকে কীভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করল, সেটাই আশ্চর্যের। সেই নিয়েই আরও গবেষণায় ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে আরও চমক বাকি, তা অবশ্য মেনেও নিচ্ছেন তাঁরা।