ভারতে ড্রাগনের দেখা পেয়েছিলেন আলেকজান্ডারের সেনাধ্যক্ষ?

একের পর এক রাজ্যে বিজয় পতাকা উড়িয়ে চলেছেন ম্যাসিডোনিয়ান সম্রাট আলেকজান্ডার। রাজ্যজয়ের জন্য কোথাও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পথে হাঁটা, কোথাও আবার স্বয়ং রাজ্যের শাসকই নতজানু। সময়টা ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া জয়ের পর, ভারতে পদার্পণ করেন আলেকজান্ডার। তারপরই একের পর এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হন তিনি। ভারতীয় সম্রাট পুরুকে হারালেও, নন্দ সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর আয়তন ছিল আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর প্রায় পাঁচগুণ। সেইসঙ্গে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় ভারতের প্রাকৃতিক গঠন। শেষ অবধি ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন আলেকজান্ডার। তবে ভারতভ্রমণের সময় তাঁর সৈন্যদল সবচেয়ে আশ্চর্য যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা হল 'ড্রাগন' দর্শন!

বলে রাখা দরকার, আলেকজান্ডার নিজে এই আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হননি। ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখেছিলেন তাঁর এক সেনাধ্যক্ষ, লেফটেন্যান্ট ওনেসিক্রেটাস। তবে ভারত আক্রমণের অর্থাৎ হিডিপাসের যুদ্ধের আগে, উত্তর-পশ্চিম ভারতের জরিপ করার সময় নাকি এই আশ্চর্য প্রাণীর দর্শন পেয়েছিলেন তিনি। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?

' এলিয়ানাস, অন দ্য নেচার অফ দ্য আনিমালস' গ্রন্থের উনবিংশতম অধ্যায়ে হাজার ওনেসিক্রেটাস উল্লেখ করেছেন এই আশ্চর্য প্রাণীর কথা। তাঁর কথায়, এই ড্রাগনের বাস হিমালয়ের এক পার্বত্য গুহায়। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, এই ড্রাগনের আয়তন ৭০ কিউবিট। প্রাচীন এই গ্রিক এককের অর্থ হল ৩ ফুট। অর্থাৎ, তাঁর কথায় এই ড্রাগন ছিল প্রায় ১২০ ফুট দীর্ঘ। তার চোখের মণির আয়তন নাকি প্রমাণ আকারের এক একটি ম্যাসিডোনিয়ান ঢালের সমান। তবে মজার ব্যাপার হল, অদ্ভুত দর্শন এই প্রাণীর সম্পূর্ণ চেহারার বর্ণনা লিখে যাননি আলেকজান্ডারের সেনাধ্যক্ষ। প্রশ্ন থেকে যায়, তবে সত্যিই কি এমন প্রাণীর দর্শন পেয়েছিলেন তিনি? নাকি পুরোটাই ছিল তাঁর মনের ভুল?

এক্ষেত্রে মনের ভুল বলে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না ব্যাপারটাকে। তার কারণ, সেদিন জরিপ করতে একা যাননি তিনি। সঙ্গে ছিল আরো বেশ-কিছু সেনানী। তারাও প্রত্যক্ষ করেছিল এই দৃশ্য। আলেকজান্ডারকে জমা দেওয়া রিপোর্টেও উল্লেখিত হয়েছিল তাদের কথা। এমনকি এই ঘটনার সাক্ষ্যও দিয়েছিল তারা।  

তবে কি ভারতে একসময় সত্যিই বাস করত এমন দৈত্যাকার প্রাণী, পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়েছে যারা? না, তেমন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ মেলেনি আজও। পাওয়া যায়নি কোনো জীবাশ্ম। ফলে, তেমনটা বলা বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। তবে সমকালীন সময়ে ড্রাগনের কিংবদন্তি মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত চিন এবং তিব্বতে। হয়তো সে কিংবদন্তিই প্রভাবিত করেছিল ওনেসিক্রেটাসের ভাবনাকে, আর তাঁর শোনা সেই ড্রাগনের 'হিস'-ধ্বনি আদতে অন্য কোনো শ্বাপদের হুংকার। আবার তিব্বতকেই ভারত হিসাবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন তিনি, থেকে যায় সেই সম্ভাবনাও। আর সেখানে তিনি সত্যিই হয়তো দর্শন পেয়েছিলেন কাগজ বা কাপড়ের তৈরি  ড্রাগনের কোনো মূর্তির। এ-ও হতে পারে, ক্লান্তি ও দুর্গম ভূ-প্রকৃতির কারণে ভারতে লড়াই করতে চাননি আলেকজান্ডারের সেনারা। তাই ভারত থেকে আলেকজান্ডারকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন গল্প ফেঁদেছিলেন ওনেসিক্রেটাস ও সহকারীরা। তাঁর এই বর্ণনা ঘিরে জেগে থাকে এমনই হাজার হাজার সম্ভাবনা। প্রায় ২৩০০ বছর পেরিয়েও যে রহস্যের সমাধান মেলেনি আজও।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More