ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বার্লিন অলিম্পিকে হিটলারকে স্যালুট করল না ভারতীয় দল

বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে থিক থিক করছে ভিড়। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের দর্শকরা অপেক্ষা করছেন আসল মুহূর্তের জন্য। হবে নাই বা কেন? অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলে কথা! কিন্তু আরও একজনের জন্য অপেক্ষায় আছেন সবাই। অবশেষে তিনি ঢুকলেন স্টেডিয়ামে। গোটা মাঠ উঠে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে তাঁকে স্যালুট করল। সামনের দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানোর এই ভঙ্গিটি ততদিনে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত। স্টেডিয়ামে উপস্থিত জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান অ্যাডলফ হিটলার।

১৯৩৬ সালের ১ আগস্ট উদ্বোধন হয় বার্লিন অলিম্পিকের। হিটলারের সামনে প্রথাগতভাবে সার বেঁধে হাঁটা শুরু করেন ৪৯টি দেশের প্রতিযোগীরা। ভারতও ছিল সেখানে। অন্যান্যবারের মতো এবারেও ছিল দেশের দুর্ধর্ষ পুরুষ হকি টিম। তার আগে দুইবার অলিম্পিকে সোনা জিতেছে এই দলটি। রয়েছেন হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদ। পতাকা হাতে সবার আগে রয়েছেন তিনি। চকচকে পোশাকে সবার নজর কেড়েছিল ভারতের অলিম্পিক দলটি। কিন্তু ইতিহাস তৈরি হয় আরও বিশেষ ঘটনার জন্য। এরপর, ঠিক সেই জিনিসটাই ঘটিয়েছিল ভারত।

প্রথামাফিক সবার আগে স্টেডিয়ামে ঢোকে গ্রিস, শেষে আয়োজক দেশ জার্মানি। প্রতিটা দলই মার্চ করার সময় হিটলারকে স্যালুট করে আসছিল। একসময় পালা এল ভারতেরও। ধ্যানচাঁদকে সামনে রেখে এগিয়ে আসে ভারতীয় অলিম্পিক দল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে, হিটলারকে কোনরকম স্যালুট না করেই চলে গেল! গোটা স্টেডিয়াম হতবাক। এটা কী হল?

স্বাভাবিকভাবেই, তখনকার খবরের কাগজগুলোয় বড়ো করে বেরিয়েছিল এই খবর। এছাড়াও, এই অলিম্পিক থেকেই টিভি সম্প্রচার শুরু হয় বলে অনেক দেশেই পৌঁছে যায় এই খবর। ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, হিটলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়। পরে, হকির ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত আর জার্মানি। কিন্তু কিংবদন্তি ভারতীয় দলের সামনে কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি জার্মানি। ৮-১-এ জিতে তৃতীয়বারের জন্য অলিম্পিকে সোনা জেতে ভারত। গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র একটা গোল হজম করে ভারতীয় দল। স্বয়ং হিটলারও মুগ্ধ হয়ে যান ধ্যানচাঁদের খেলা দেখে। এমনকি, জার্মানির হয়ে তাঁকে খেলারও প্রস্তাব দেন ফ্যুয়েরার। বলা বাহুল্য, রাজি হননি হকির জাদুকর।