ওআরএস, অর্থাৎ ওরাল রিহাইড্রেসন সলিউশন, আজও কলেরা বা ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বড়ো ভরসা। উপাদান অত্যন্ত সরল, অথচ এই আবিষ্কারের সঙ্গেই জড়িয়ে এক দীর্ঘ ইতিহাস। আর এই আবিষ্কারই নাকি বিশ শতকের চিকিৎসা জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। অন্তত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তেমনটাই মনে করে। আর বিশ্বের দরবারে এই চিকিৎসাকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে সবচেয়ে বড়ো কারিগর একজন বাঙালি। তিনি চট্টগ্রামের চিকিৎসক ধীমান বড়ুয়া। গত শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, প্রয়াত হলেন সেই কিংবদন্তি বাঙালি।
১৯২০ সালে চট্টোগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন ধীমান বড়ুয়া। এবছর শতবর্ষে পা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ঠিক দুমাস আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ধীমান বড়ুয়া। কিংবদন্তি এই বাঙালির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
১৯৪১ সালে চট্টোগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন ধীমান বড়ুয়া। এরপর কলকাতায় চলে আসেন স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার জন্য। তারপর লখনৌ এবং প্যারিস হয়ে ১৯৫৯ সালে টেক্সাস শহরে পৌঁছেছিলেন তিনি। একজন বাঙালির পক্ষে তখন বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নেওয়া সত্যিই কঠিন ছিল। কিন্তু ডা. বড়ুয়া নিজের যোগ্যতায় সেই অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলেছিলেন। ১৯৬৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য হিসাবে যোগ দেন তিনি। আর তারপর সারা পৃথিবীতে নানা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। আর এই সূত্রেই আবার বাংলায় ফিরে আসা ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধে প্রেক্ষাপটেই কলেরার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত অঞ্চলে। আইভি স্যালাইনের জোগান প্রায় নেই বললেই চলে। আর এই সময়েই বাংলাদেশের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম আবিষ্কার করে ফেললেন ওআরএস।
এই আবিষ্কার অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচালেও তার কার্যকারিতা মানতে রাজি ছিলেন না অনেকেই। এমনকি এর সঙ্গে ভারতের কালাজাদুর প্রভাব মিশে আছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন পাশ্চাত্যের অনেক চিকিৎসক। কিন্তু ডা. বড়ুয়া যে নিজের চোখে দেখেছেন তার কার্যকারিতা।
১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে ডায়রিয়া গবেষণা সংস্থা গড়ে তোলেন ডা. ধীমান বড়ুয়া। আর সেইসঙ্গে চলল গবেষণা। অবশেষে রফিকুল ইসলামের ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ করলেন তিনি। ১৯৮০ সালে ওআরএস-কে স্বীকৃতি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুধু তাই নয়, একে বিশ শতকের চিকিৎসা জগতের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলেও ঘোষণা করা হয়। আর সেই আবিস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে গেল দুই বাঙালির নাম। তাঁদের একজন ২০১৮ সালেই প্রয়াত হয়েছেন। অন্যজনও বয়সের ভার সহ্য করতে না পেরে বিদায় নিলেন। শুধু থেকে গেল তাঁদের আবিষ্কার।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
যুদ্ধের সমাপ্তি, প্রয়াত ভারতীয় সংস্কৃতির ‘রণনেত্রী’ কপিলা বাৎসায়ন