ভারতের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর ধনুষকোডি। শহরটায় একটা সময় সবই ছিল। রেল, হাসপাতাল, স্কুল, অফিস— সবকিছুই। হঠাৎ করেই সেই স্পন্দন থেমে যায়। শহরটা সিনেমায় দেখা ভূতুড়ে এলাকাগুলোর মতো চেহারা নিয়ে নেয়। আজ প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে একইভাবে জনমানসহীন হয়ে পড়ে রয়েছে।
ধনুষকোডির অবস্থান ভারী অদ্ভুত জায়গায়। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম জেলার এই দ্বীপ শহর থেকে শ্রীলঙ্কার দুরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। এমনকি ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এর উপর দিয়েই ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে যাতায়াত করা হত। ধনুষকোডিকেও তার উপযুক্ত করে গড়া হচ্ছিল। ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে জলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারও দশ বছর আগে, ১৯৬৪ সালে থেকেই আস্তে আস্তে শহরটার মৃত্যু হতে শুরু করে। সৌজন্যে ’৬৪-এর বিখ্যাত ‘রামেশ্বরম সাইক্লোন’, যা শহরটাকে একদম তছনছ করে দিয়ে চলে যায়। মৃত্যু হয় প্রায় দুই হাজার মানুষের। যারা বেঁচে ছিলেন, তাঁরাও চলে আসেন তামিলনাড়ুতে। ব্যস, তারপর থেকেই ভূতুড়ে শহর হয়ে যায় ধনুষকোডি।
জায়গাটা নিয়ে মিথও কম নেই। মনে করা হয়, লঙ্কায় সীতাকে উদ্ধারের জন্য সমুদ্রের ওপর রামচন্দ্র যে সেতু নির্মাণ করেছিলেন, তার শুরু নাকি এখান থেকেই হয়েছিল। ধনুষকোডির শেষ প্রান্ত থেকে একটা বালির পথ সত্যিই শ্রীলঙ্কার দিক বরাবর ক্রমশ জলে মিলে গেছে। কিন্তু ‘রাম-সেতু’ নিয়ে বিতর্ক থামেনি। তার মধ্যেই একটা মিথের শহর একেবারে শূন্য, ফাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের তীরে।