একসময় পরিষ্কার আকাশের বুকে প্রায়ই দেখা যেত এক বিরাট ডানার পাখিকে। উঁচু থেকে মৃতদেহ দেখতে পেলেই নেমে আসত। চিল। আজকাল আর প্রায় দেখাই যায় না তাদের। একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে তারা। এর মধ্যেই কেউ কেউ তাদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক তেমনই একজন পুরনো ঢাকার রাফিদ হক সোয়াদ। তাঁর নিজের দোতলা বাড়ির ছাদের গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি আশ্রয়কেন্দ্র। রাফিদ তার নাম দিয়েছেন অভয়াশ্রম। বিগত চার বছর ধরে নানা জায়গার আহত চিলদের নিয়ে এসে সুশ্রূষা চালিয়ে যাচ্ছেন রাফিদ।
শুধুই চিল নয়, অরণ্য ও পথবাসী নানা প্রাণীদের জন্যই অবারিক রাফিদের বাড়ি। যে কোনো প্রাণীকে আহত অবস্থায় দেখতে পেলেই চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। প্রথম প্রথম অবশ্য তাঁর এই কাজে রীতিমতো রুষ্টই হয়েছেন পরিবারের লোকজন। ছেলের উপর অভিমানে দীর্ঘ ৮ বছর বাড়ির ছাদে পা রাখেননি রাফিদের মা রুবিনা হক। তবে শেষ পর্যন্ত ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তাঁকেও।
৪ বছর আগে একটি আহত চিলকে দেখে ছাদে নিয়ে আসেন রাফিদ। সেই থেকেই চিলের প্রতি তাঁর এক অদ্ভুত আকর্ষণ। তার সবচেয়ে বড়ো কারণ, কুকুর-বেড়ালদের তো তাও অনেকেই সেবা করেন। কিন্তু চিলদের প্রতি মানুষের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং কোথাও চিল দেখলেই তাকে আক্রমণ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষই চিলকে আহত করে বলে জানিয়েছেন রাফিদ। তাই তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধেই। প্রথম প্রথম প্রাণী চিকিৎসকদের কাছে সাহায্যের জন্য গেলেও চিলের চিকিৎসা করতে অনেকেই রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু বইপত্র পড়ে নিজেই শিখে নিয়েছেন চিকিৎসার পদ্ধতি। তবে একটা বিষয়ে সবসময় নজর রাখেন রাফিদ, কোনোভাবেই যেন এই পাখি মানুষের পোষ না মানে। সুস্থ হয়ে গেলেই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আকাশে। এমনকি রাফিদের কথায়, ছেড়ে দেওয়ার আগে তিনি পাখিদের একটু ভয় দেখিয়েই দেন। ভবিষ্যতে যাতে তারা মানুষের কাছাকাছি না আসে। এতে তারাও যেমন মানুষের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে, তেমনই অনেক সময় চিল যেমন বিভিন্ন গৃহপালিত পশুপাখির ক্ষতি করে, তাও কমবে।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে এখন বিভিন্ন প্রজাতির চিলের মোট সংখ্যা বড়জোর ২৫ হাজার। আর দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু প্রজাতি তো একেবারেই বিলুপ্তির মুখে। এই পরিস্থিতিতে রাফিদের উদ্যোগ সত্যিই এক ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করে। প্রকৃতি থেকে একটি প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া যে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আরও পড়ুন
পোষ্য প্রাণীদের দূরে সরিয়ে দেবেন না, আগলে রাখুন মহামারীতেও
তথ্যসূত্র :
আহত চিলের অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছেন ঢাকার যে তরুণ, বিবিসি নিউজ বাংলা
আরও পড়ুন
উটেদের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল, প্রাণী সুরক্ষায় পথ দেখাচ্ছে চিন
Powered by Froala Editor