পেরেকের যন্ত্রণা থেকে গাছেদের মুক্তি দিতে, ৭ জেলা ঘুরে ঢাকায় ওয়াহিদ সরদার

যশোর জেলা থেকে সাইকেলে চড়ে রাজধানী ঢাকায় এসেছেন এক প্রৌঢ়। মাথায় কৃষকদের টুপিতে লাল-সবুজ রং যেন বাংলাদেশের জীবন্ত প্রতীক। সাইকেলের পিছনে বাঁধা একটি বস্তা আর একটি শাবলের আকৃতির লোহার দণ্ড। ঢাকা শহরে আসার কারণ অবশ্য বেশ অদ্ভুত। তিনি এসেছেন রাজধানীর গাছ থেকে পেরেক তুলতে। লোহার দণ্ড দিয়ে সেইসব পেরেক তুলে বস্তায় জমা করেন। গাছেরও যে প্রাণ আছে। তার মানে তার ব্যথা-যন্ত্রণা বোধও আছে। এই কথাটাই মনে করিয়ে দিতে চান ওয়াহিদ সরদার।

পেশায় রাজমিস্ত্রী ওয়াহিদ সরদার। অবশ্য মন সবসময় পড়ে থাকে গাছেদের কাছে। তিনি বলেন, গাছেরাই তাঁর সন্তান। ২০০৬ সালেই নিজের জেলায় শুরু করেছিলেন গাছ লাগানোর কাজ। ১২ বছর ধরে এই কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু এরপর তাঁর মনে হল, রাস্তায় গাছের গায়ে যে নির্দ্বিধায় মানুষ পোস্টার, ব্যানার লাগাতে পেরেক পুঁতে চলেছে, এর তো একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসেই তাই বেরিয়ে পড়লেন সাইকেল নিয়ে। প্রথমে যশোর জেলায়, তারপর ঝিনাইদহ, খুলনা সহ ৭টি জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন এই আড়াই বছরে। সংগ্রহ করেছেন মোট ৪৫০ কেজি পেরেক।

প্রথমে অবশ্য সবাই তাঁকে পাগল মনে করেছিলেন। কোথাও কোথাও তো মানুষ রীতিমতো খাপ্পা হয়ে উঠেছিল তাঁর উপর। বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের প্রচারবস্তু, গাছের গা থেকে সরিয়ে দেন সবই। আর এর ফলে প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন তিনি। অবশ্য অনেকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। অচেনা জায়গায় রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন কেউ কেউ। ওয়াহিদ সরদার বিশ্বাস করেন, একদিন মানুষ সচেতন হবেন। এভাবে গাছেদের শরীরে লোহার পেরেক পুঁতে দেওয়া হবে না আর। আর সেদিনের মানুষের সামনে এই সময়ের ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে তুলে ধরতেই সমস্ত পেরেক জমিয়ে রাখছেন ওয়াহিদ সরদার। এই সংগ্রহই সেদিন হয়ে উঠবে একটি মিউজিয়াম। ওয়াহিদ বলেন, যতদিন শরীরে জোর থাকবে, ততদিন এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন তিনি। মানুষকে তিনি বোঝাবেন, গাছেরাও ব্যথা পায়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More