মানুষ জানত, এখানে আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে রাস্তা তৈরির কাজ। সমস্ত সরকারি কাগজ তৈরি। কিন্তু পাখিরা সেসবের হদিশ কোথায় পাবে? তাই কোনোকিছু না জেনেই কয়েক হাজার ডিম পেড়েছিল পরিযায়ী স্লেন্ডার-বিল্ড গাল। তবে সেই ডিম ফুটে শাবক জন্ম নেওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেল রাস্তা নির্মাণের কাজ। আর হাজার হাজার ডিম রীতিমতো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে ভাইরাল হয়ে উঠেছে গুজরাটের এই ঘটনার ভিডিও।
ট্যুইটারে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ট্রাস্ট সংস্থার কর্ণধার অনীশ আন্ধেরিয়া ভিডিওটি প্রকাশ করেন। তিনি জানিয়েছেন, কচ্ছের রানের নিকটবর্তী একটি গ্রাম থেকেই এই দৃশ্য তুলে আনা হয়েছে। বছরখানেক আগেই সেখানে পাকা রাস্তা তৈরির সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু করোনা অতিমারী এবং লকডাউনের কারণে নির্মাণ প্রক্রিয়া কিছুই এগোয়নি। এবার কাজ শুরু হতেই জন্ম নিল বিতর্কও। স্লেন্ডার-বিল্ড গালের ডিম নষ্ট হওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নিলেও স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য সেখানে খুব বেশি হলে ৫০০টি ডিম ছিল। তাদের বেশিরভাগই নিরাপদে জঙ্গলের আরও গভীরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ডজন খানেক ডিম নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে শ্রী আন্ধেরিয়ার দাবি, সেখানে অন্তত ৫ হাজার ডিম ছিল। স্লেন্ডার-বিল্ড গাল কখনও এর থেকে কম সংখ্যায় এক জায়গায় ডিম পাড়ে না।
শুধুই স্লেন্ডার-বিল্ড গাল নয়, সেইসঙ্গে অন্তত ১০০টি প্রাপ্তবয়স্ক ফ্লেমিংগো পাখির মৃত্যু হয়েছে রাস্তা তৈরির কাজে। অথচ বনবিভাগের কাছে কোনো তথ্যই নাকি নেই। গত শীতে যে সেখানে পরিযায়ী পাখিরা এসে বাসা বেঁধেছিল, সেই তথ্যও নেই বনবিভাগের কাছে। অন্যদিকে তাঁরা শ্রী আন্ধেরিয়ার ভিডিওটিকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছেন। আন্ধেরিয়া অবশ্য সমস্ত প্রমাণ দিতে প্রস্তুত বলেই জানিয়েছেন। কিন্তু যে পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের বিষয়ে সারা পৃথিবীজুড়ে নানা স্তরে আলোচনা চলছে, সেখানে গুজরাটের বনবিভাগের এমন আচরণ সত্যিই অবাক করে। নাকি সত্যিই উন্নয়নের সামনে প্রকৃতির হার মানাই রীতি? মানুষ তো বটেই, সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষা করতে গেলে এই মানসিকতারই পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
Powered by Froala Editor