প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, এখনও সমানে জ্বলছে মিজোরামের দাবানল। সীমান্তবর্তী রাজ্যের তিনটি জেলা পুরোপুরি আগুনের কবলে। রাজ্য ও কেন্দ্রের একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাসে দাবানলের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে একের পর এক এরকম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
কিছুদিন আগেই উত্তরাখণ্ডের দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে বনবিভাগকে। এবার আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে মিজোরাম। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের অন্তত ৩ হাজার পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। এমনকি এখনও নতুন নতুন পয়েন্টে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। গত শনিবার ভোরবেলায় মিজোরামের লুংলাই শহরের নিকটবর্তী বনভূমিতে প্রথম আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। রবিবার সকালের মধ্যেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে শহরের মধ্যেও। এরপরেই নড়েচড়ে বসে বনবিভাগ। জনবসতি থেকে আগুন সরিয়ে নিয়ে যাওয়া গেলেও তা বনভূমির রেখা ধরে ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে অনেকদূর।
মিজোরাম প্রশাসন সূত্রে সোমবার জানানো হয়, অন্তত সাতটি গ্রাম আগুনের কবলে চলে যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামবাসীদের। বসতি অঞ্চলে আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কয়েকটি গ্রামে এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে আগুন। ফলে সাময়িক অসাবধানতা থেকেও বড়ো বিপদ ঘটে যেতে পারে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে কয়েকজন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবিভাগ। যদিও সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো অসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নেই।
লুংলাই জেলা ছাড়িয়ে লংৎলাই এবং নাথিয়াল জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে আসাম রাইফেলের তিনটি বাহিনী। যুদ্ধকালিন তৎপরতায় চলছে আগুন নেভানোর কাজ। তবে সময় যত এগোচ্ছে, ততই বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগুনের কবলে চলে যাচ্ছে। বনভূমির পাশাপাশি আগুনের কবলে চলে যাচ্ছে কৃষিজমিও। ফলে মিজোরামের অর্থনীতিতে বড়ো বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে সরকার। আগুন লাগার কারণ সম্বন্ধে যদিও এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে ঝুম চাষ করতে গিয়েই আগুন লেগেছে।
আরও পড়ুন
দেশজুড়ে একাধিক জঙ্গলে দাবানল, প্রতিবছর একই ঘটনার কারণ কী?
সাম্প্রতিক সময়ে সারা পৃথিবীজুড়ে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উঠে আসছে বারবার। গত এক বছরে ভারতেও দাবানলের ঘটনা কম ঘটেনি। সেই তালিকাতেই নতুন সংযোজন মিজোরামের ঘটনা। এদিকে বঙ্গোপসাগরীয় তাপপ্রবাহ আর দু-একদিনের মধ্যেই পূর্ব ভারতে আছড়ে পড়বে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। তখন আগুন মোলাবিলা আরও কঠিন হবে। এইভাবে একের পর এক বনভূমি ছাই হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ যে যথেষ্ট বিপদের মুখে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আপাতত ক্ষতির পরিমাণ কতটা কমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, সেই চেষ্টাই করছে বনবিভাগ এবং সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুন
সিমলিপাল অরণ্যে বিধ্বংসী দাবানল, বিপন্ন বহু বন্যপ্রাণ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দাবানলে বিলুপ্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেখা মিলল অস্ট্রেলিয়ার পিগমি পসামের