পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় মুছে যেতে বসেছে মহেঞ্জোদারোর ইতিহাস

শুধু মিশর কিংবা মেসোপটেমিয়াই নয়, আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে উত্তর-পশ্চিম ভারতেও গড়ে উঠেছিল আধুনিক সভ্যতা। আর সেই সভ্যতারই দুই যমজ সন্তান মহেঞ্জোদারো (Mohenjo Daro) ও হরোপ্পা। ঐতিহাসিকদের একাংশের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যার কারণেই পরিত্যক্ত হয়েছিল এই প্রাচীন নগরী। পাঁচ হাজার বছর পেরিয়ে এবার ফের বন্যার গ্রাসে ইউনেস্কোর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান। প্রমাদ গুনছে ধ্বংসের।

গত ১৬ আগস্ট থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ভয়াবহ বৃষ্টি শিকার হয় পাকিস্তানের একাধিক অঞ্চল। যার মধ্যে ছিল সিন্ধুপ্রদেশও। ৭৭৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে রীতিমতো জলার তলায় তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফুলে ফেঁপে ওঠে সিন্ধু নদের জলও। সবমিলিয়ে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ কাড়ে ভয়াবহ এই বন্যা (Flood)। এখনও পর্যন্ত বাসস্থান হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। 

প্রকৃতির এই ভয়াবহ রোষ থেকে রক্ষা পায়নি বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে অবস্থিত মহেঞ্জোদারোও। প্রবল বর্ষণে যেমন ধ্বসে পড়েছিল ৫০০০ বছর আগের তৈরি বেশ কিছু প্রকাণ্ড দেওয়াল, তেমনই কয়েক ফুট জল জমে যায় গোটা প্রত্নক্ষেত্রে। জল জমে থাকার কারণে, ভিতর থেকে ক্রমশ ক্ষয় ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে বাকি ধ্বংসাবশেষও, আশঙ্কা প্রত্নতাত্ত্বিকদের। 

গত ২৯ আগস্ট সে-দেশের সংস্কৃতি ও প্রত্নবিভাগের পরিচালকের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছিলেন মহেঞ্জোদারোর কিউরেটর আহসান আব্বাসি। সামান্য কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক নিয়েই শুরু হয়েছিল মেরামতির কাজ। সেইসঙ্গে পাম্প লাগিয়ে জমে থাকা জল নিষ্কাষনেরও ব্যবস্থা করা হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এভাবে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন আব্বাসি। সরকারের সাহায্য ছাড়া এ-যেন এক অসম লড়াই। অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত কোনো সদুত্তর মেলেনি পাক-প্রশাসনের তরফ থেকে। এমনকি স্থানীয় সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি অভিযোগ, ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের দলও পাঠানো হয়নি। 

বন্যায় মহেঞ্জোদারোর আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত, তার এখনও পর্যন্ত মূল্যায়ন সম্ভব হয়নি। তবে কিউরেটরের মতে বন্যার কারণে সম্পূর্ণভাবে মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র, শস্য সংগ্রহের কক্ষগুলির। আর তা যদি হয়ে থাকে তবে সেই ক্ষতি অপূরণীয়। 

বিগত একশো বছরে সিন্ধু নদ-সহ পাকিস্তানে এধরনের বন্যা দেখা যায়নি বললেই চলে। জলবায়ু পরিবর্তন যে ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে, বদলে দিচ্ছে বৃষ্টি রেখা, তারই প্রমাণ এই মহেঞ্জোদারোর এই ধ্বংসযজ্ঞ… 

Powered by Froala Editor

Latest News See More