মাইল খানেক দূর থেকেও পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁঝালো পোড়া গন্ধ। আর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি ছেয়ে ফেলেছে গোটা আকাশটাকেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় প্রদেশের ছবি এখন এমনটাই। দাউ দাউ করে জ্বলছে উত্তর ইলিনয়ের একটি রাসায়নিক কারখানা। শুধু স্থানীয়রাই নয়, বিপর্যস্ত প্রকৃতিও। এমনকি আগামী বেশ কয়েকদিন ধরেই এই আগুন জ্বলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত বড়ো পরিবেশগত বিপর্যয়ের উদাহরণ নেই বললেই চলে।
ইলিনয়ের রকটনে অবস্থিত ‘কেমটুল’ কারখানায় অগ্নিসংযোগ হয় গতকাল সকালেই। আগুন লাগে কারখানার একটি চেম্বারে। মূলত গ্রিস এবং লুব্রিকেটিং তেলের প্রক্রিয়াকরণের কাজ হয় এই কারখানায়। ফলে, মুহূর্তের মধ্যেই বিধ্বংসী রূপ নেয় অগ্নিকাণ্ড। তখনও কর্মরত ছিলেন কারখানার শ্রমিকরা। ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়ার পরেই দ্রুত বেরিয়ে আসেন তাঁরা। ঘটেনি তেমন কোনো প্রাণহানির ঘটনাও।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ১৭৫ জন দমকলকর্মীর একটি বাহিনী। প্ল্যান্টের এক মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাসকারী দেড়শো পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি তৎপরতায়। একদিকে যেমন রাসায়নিক গ্যাসে ছেয়ে গেছে গোটা অঞ্চল। তেমনই ক্রমাগত বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়েছে ছাই।
তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করলে তা বন্ধ করতে হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় কারখানার ভৌগলিক অবস্থান। কারখানা থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরেই অবস্থিত রক নদী। আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত জল রাসায়নিকের সঙ্গে মিশে প্রবাহিত হচ্ছে সেই নদীর দিকেই। ফলত, জলজ বাস্তুতন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাবের কথা ভেবেই বন্ধ রাখা হয়েছে উদ্ধারকাজ। তবে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকেই লক্ষ রাখছেন দমকলকর্মীরা। তাঁদের অভিমত, সমস্ত জ্বালানি পুড়ে যাওয়া পর্যন্ত এই আগুন নেভা কার্যত অসম্ভব। এমনকি আগামী এক সপ্তাহ ধরে এই আগুন জ্বলতে পারে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ জ্বলার পর ডুবল রাসায়নিক কার্গো জাহাজ, বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা
অন্যদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঠিক কীভাবে— সে ব্যাপারে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে একটি বিশেষজ্ঞ দল। শুরু হয়েছে পরীক্ষানিরীক্ষাও। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক রিপোর্ট দূষিত গ্যাস এখনও পর্যন্ত ভূমিস্তরের বায়ুকে বিষিয়ে তুলতে পারেনি। ফলে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষের এখনও নিরাপদ। ক্রমাগত নজরে রাখা হচ্ছে গোটা পরিস্থিতিটা। তবে এই পরিবেশের ওপর অগ্নিকাণ্ডের যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে চলেছে— তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
আরও পড়ুন
ছাইঢাকা গোটা অঞ্চল, এন্নোর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা
Powered by Froala Editor