আমরা কথায় কথায় হামেশাই বলে থাকি ‘চাঁদের টুকরো’। বাঙালির ডিকশোনারিতে এই শব্দটি প্রায় বিশেষণ-সম। কোনো ব্যক্তির নিষ্কলঙ্ক, স্নিগ্ধ চরিত্রকে বোঝাতে এই শব্দবন্ধের জুড়ি মেলা ভার। এবার মহাকাশবিজ্ঞানীরা বাস্তবেই হদিশ পেলেন ‘চাঁদের টুকরো’-র (Piece Of Moon)। না, স্নিগ্ধতা নেই তাতে। বরং, মিশে আছে আতঙ্ক। পৃথিবীর এত কাছ দিয়ে আবর্তনরত বিশালাকার এই টুকরো ভুল করেও যদি ধেয়ে আসে পৃথিবীর দিকে— তবে নিস্তার নেই কারোরই।
বছর পাঁচেক আগের কথা। ২০১৬ সালে দক্ষিণ অ্যারিজোনার মাউন্ট গ্রাহাম অবসার্ভেটরিতে প্রথম টেলিস্কোপে ধরা পড়েছিল এই গ্রহাণু তথা ‘চাঁদের টুকরো’-র অস্তিত্ব। পৃথিবী থেকে মাত্র ১.৪ কোটি কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে আবর্তনরত এই গ্রহাণুর আয়তন প্রায় লন্ডন আইয়ের সমান। তার গতিও নেহাত কম নয়। কিন্তু ‘কামোওয়ালেয়া’-খ্যাত এই গ্রহাণুটি নিয়ে রহস্য, বিতর্ক বা রোমাঞ্চ— অভাব ছিল না কোনোটারই। এবার দীর্ঘ গবেষণার পর, গ্রহাণুটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করলেন গবেষকরা। সামনে আনলেন পৃথিবীর এই সদ্য-আবিষ্কৃত প্রতিবেশীর রহস্য। সম্প্রতি নেচার কমিউনিকেশন আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি।
কিন্তু পৃথিবীকে আবর্তনরত প্রস্তরখণ্ডটি যে চাঁদেরই টুকরো, তা কীভাবে বুঝলেন গবেষকরা? মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যেই রয়েছে অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট বা গ্রহাণুপুঞ্জের বলয়। সেখান থেকেই এই গ্রহাণুর ছিটকে আসার সম্ভবনা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না কোনোভাবেই। তবে এই অঞ্চলে প্রাপ্ত গ্রহাণুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রহাণুটির গতিবিধির বিশ্লেষণকে পাশাপাশি রাখতেই ফুটে ওঠে তফাৎ। তার গতির ধরণ যেমন আলাদা, তেমনই এই বিশেষ গ্রহাণুটি পৃথিবীকে আবর্তন করছে একটি অস্বাভাবিক কক্ষপথে। তার বয়সও অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের বয়সের থেকে বহুগুণ কম।
গবেষকদের অনুমান, ৫০০ থেকে ১ লক্ষ বছর আগে জন্ম এই গ্রহাণুটির। কিন্তু তা যে ‘চাঁদের টুকরো’-ই, জোর গলায় বলছেন কী করে গবেষকরা? পাথরের টুকরোটির ওপর আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমেই গবেষকরা বিবেচনা করছেন সেটা চাঁদেরই অংশ। পাশপাশি অ্যাপোলো মিশনে নিয়ে আসা চাঁদের পাথরের সঙ্গেও বেশ খানিকটা মিল রয়েছে এই গ্রহাণুর আণবিক গঠনের। কোনো বড়ো গ্রহাণু কিংবা ধূমকেতুর সঙ্গে চাঁদের ধাক্কা লাগার পর, এই খণ্ডিত অংশটি ছিটকে বেরিয়ে আসে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে। তবে এখনও বিস্তারিত গবেষণার পরিসর রয়েছে বলেই বিশ্বাস তাঁদের। সেই অনুসন্ধান জারি থাকবে আগামীতেও। শুধু ততদিনে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসে তা বিপত্তি না ঘটালেই হল…
আরও পড়ুন
চাঁদের মতো বিশালাকার গহ্বর তৈরি হচ্ছে পৃথিবীতে, উদ্বিগ্ন গবেষকরা
Powered by Froala Editor