মাস দুয়েক আগের কথা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী বিশ্বেশ্বর টুডু ঘোষণা করেছিলেন, নমামি গঙ্গা কর্মসূচির সৌজন্য দূষণ কমেছে গঙ্গায়। উন্নত হয়েছে জলের পরিমাণ। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এল সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। জলের মান উন্নত হওয়া তো দূরের কথা, বরং গঙ্গায় ক্রমশ বেড়ে চলেছে ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ। নিষ্কাশিত বর্জ্য জল পরিশোধনের অভাবই এ-ধরনের ঘটনার কারণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া (Faecal Coliform)। সাধারণত এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার উৎস উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের অন্ত্র এবং মল। ফলে, গঙ্গায় কলিফর্মের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া স্পষ্টতই নির্দেশ করছে মানব ও প্রাণিজ বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে গঙ্গায় (Ganges)। একদিকে যেমন গঙ্গায় গরু, মোষ এবং অন্যান্য গবাদি পশু স্নান করানোর সময় কলিফর্ম মেশে জলের সঙ্গে, তেমনই নিকাশি ব্যবস্থার দূষিত জল পরিশোধন না-করে গঙ্গায় ফেলা হলেও মাত্রা বৃদ্ধি পায় কলিফর্মের।
অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় এই রিপোর্ট। গঙ্গার স্বাস্থ্য-পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের জন্য সবমিলিয়ে ৯৭টি পরীক্ষাকেন্দ্র বা স্টেশন রয়েছে ভারতে। যার মধ্যে ৫৯টি স্টেশন থেকে এখনও পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড। সম্প্রতি ‘তথ্যের অধিকার’ বা রাইট টু ইনফর্মেশন আইনের অধীনে এই তথ্য প্রকাশের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাটির কাছে আবেদন করেছিল নয়া দিল্লি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডাউন টু আর্থ’। তাদের দেওয়া কেন্দ্রীয় সংস্থার উত্তরেই প্রকাশ্যে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত এক বছরে ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে কলিফর্মের মাত্রা।
আশ্চর্যের বিষয় হল, নমামি গঙ্গা কর্মসূচির অধীনে বিগত ৮ বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে ৪০৯টি জল পরিশোধন কেন্দ্র বা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। স্বাভাবিকভাবেই গবেষকরা আঙুল তুলছেন এইসব পরিশোধন কেন্দ্রের কার্যকারিতার দিকে।
উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ— পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই তিন রাজ্যে গঙ্গাবক্ষে কলিফর্মের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কোথাও কোথাও কলিফর্মের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার প্রায় ৩৭ গুণ। কলিফর্মের এই অস্বাভাবিক ঘনত্ব বৃদ্ধি গাঙ্গেয় বাস্তুতন্ত্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যেও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে আগামীতে, সে-ব্যাপারেও সচেতন করছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor