মেরু অঞ্চলেও বাস করত ডাইনোসরেরা!

তাপমাত্রা শূন্যের থেকেও ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। যতদূর দেখা যায় শুধু বরফ আর বরফ। আর তার মাঝখান দিয়েই বয়ে চলেছে ঠান্ডা জলস্রোত। রাতের বেলায় এই অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন পড়বে না কোনো। পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে স্বয়ং রাতের আকাশ। সেখানে ঝলমল করছে হাজার রং-এর ছটা। অরোরা বোরিয়ালিস। 

হ্যাঁ, আলাস্কার (Alaska) কথাই হচ্ছে। এই হিমায়িত প্রান্তরে শ্বেতভল্লুক, বলগা হরিণ, মুস কিংবা মেরু-নেকড়ের মতো কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী বসবাস করলেও, দেখা মিলবে না সরীসৃপ বা উভচরদের। তার কারণও খুব সুস্পষ্ট। শীতল রক্তের প্রাণী হওয়ায় প্রচণ্ড ঠান্ডায় হিমায়িত হয়ে যায় এইসকল প্রাণীদের রক্ত। তবে অবাক করার বিষয় হল, তা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে একসময় দাপিয়ে বেড়াত প্রকাণ্ড সব সরীসৃপ— ডাইনোসর (Dinosaur)।

বিষয়টা আশ্চর্য হওয়ার মতোই বৈকি। ১৯৬১ সাল। তৈল খনন কম্পানির হয়ে সার্ভে ও ম্যাপিং করতে আলাস্কায় হাজির হয়েছিলেন ভূবিদ রবার্ট লিসকম্ব। আলাস্কা ডাইনোসরদের আবাসস্থল ছিল একসময়, এই আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন তিনিই। সার্ভে করার সময়ই অপ্রত্যাশিতভাবে বেশ কিছু হাড়ের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। রবার্টের অনুমান ছিল, এই হাড় কোনো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর। তবে এই জল যে ডাইনোসর পর্যন্ত গড়াবে, সে-ব্যাপারে তার কোনো ধারণা ছিল না। সঙ্গে সঙ্গেই তা যথাযথভাবে সংগ্রহ করে নিজের দেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ঠিক ছিল, দেশে ফেরার পর শুরু করবেন গবেষণা।

তবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এই আবিষ্কারের মাত্র এক মাসের মাথায় একটু তুষারধ্বসে প্রাণ হারান মার্কিন গবেষক। দু’দশক ধরে আর্কাইভে থাকার পর এই হাড়গুলো নিয়ে চর্চা শুরু হয় আশির দশকে। নরওয়ের একটি দ্বীপে ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, আদৌ কি শীতল রক্তের সরীসৃপ ছিল ডাইনোসররা? 

অনেকের দাবি ছিল, আলাস্কা নাকি সে-সময় আজকের মতো ঠান্ডা ছিল না। তাই অনায়াসেই বসবাস করতে পারত ডাইনোসররা। তবে সাম্প্রতিক একাধিক প্রমাণ জানাচ্ছে অন্য কথা। সে-যুগে আলাস্কা আজকের মতো শীতল না হলেও, সেখানকার তাপমাত্রা ছিল -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে আরও কমে যেত সেই তাপমাত্রা। তবে ডাইনোসররা সেখানকার ১২ মাসের বাসিন্দা না হওয়ায়, তেমন কোনো অসুবিধা হত না তাদের। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রজাতির ডাইনোসর অভিযোজিত হয়েছিল এই তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে। অনেকের শরীরেই থাকত পালক কিংবা পাখির মতো চঞ্চু। 

আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েন্টোলজিস্টদের তৈরি সাম্প্রতিক মডেল অনুযায়ী, সে-সময় ৪ মাস দিন এবং ৪ মাস রাত থাকত আলাস্কায়। দিনের সময় অর্থাৎ গ্রীষ্মেই আলাস্কা পাড়ি জমাত ডাইনোসররা। অনেকটা পরিযায়ী পাখিদের মতোই। গড়ে তুলত কলোনি। ডিম পাড়ত সেখানে। তারপর অপেক্ষা মাস চারেকের। আবার রাত্রি নামার পর সেখান থেকে পাড়ি দিত দক্ষিণে। ডাইনোসরের হাড় তো বটেই, এ-ধরনের বহু ব্রিডিং-গ্রাউন্ডও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। সবমিলিয়ে ডাইনোসররা যে শীত-কাতুরে ছিল না মোটেই, তারই প্রমাণ দিচ্ছে এই গবেষণা… 

Powered by Froala Editor

Latest News See More