আজও জানা নেই, এই করোনা পরিস্থিতিতে আদৌ বইমেলা সম্ভব হবে কিনা। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের তরফ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও অবধি বইমেলার নির্দিষ্ট কোনো দিন ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি প্রতি বছরের রীতি ভেঙে এবার গ্রীষ্মের সময়েও বইমেলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে। তবে বইমেলা হচ্ছেই, আশাবাদী গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এ-বছর বইমেলা করতেই হবে। ২০২১ সাল তো বাঙালির জীবনে আরেকবার আসবে না। আর এই বছর যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর, তেমনই বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। বাঙালির ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে এই বছরটা ভীষণ জরুরি।”
হ্যাঁ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনকেই এবারের বইমেলার থিম হিসাবে তুলে আনতে চলেছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। ত্রিদিববাবু জানালেন, গতবছরের বইমেলার শেষেই এই নিয়ে কথা হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানোও হয়ে গিয়েছে। তিনি আসবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই এসে গেল অতিমারী করোনা। ফলে সবকিছুর মতোই অনিশ্চিত বইমেলার ভবিষ্যতও। তবে বইমেলা নিয়ে এখনও গিল্ডের কর্তাদের মতোই আশাবাদী বাংলাদেশ হাইকমিশনও। আর এবার হয়তো সমস্ত মেলা চত্বর জুড়েই খেলা করবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি। ত্রিদিববাবু জানালেন, “বইমেলার প্রবেশদ্বারে হয়তো দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা।”
কলকাতার বুকে বাংলাদেশের স্মৃতি এভাবে উঠে আসতে চলেছে শুনে খুশি ওপার বাংলার সাহিত্যিকরাও। বাংলাদেশের সাহিত্যিক পিয়াস মজিদের কথায়, “মুক্তিযুদ্ধ তো আসলে সারা বাংলার লড়াই। তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশ থেকে বাংলাদেশ তখন যা সাহায্য পেয়েছে তার একটা প্রধান কেন্দ্র ছিল কলকাতা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনও শুরু হয়েছে কলকাতা শহরেই। কলকাতার গড়ের মাঠ থেকেই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মৈত্রীর ডাক দিয়েছিলেন। দুই বাংলার সাহিত্যেই বারবার উঠে এসেছে দেশভাগের যন্ত্রণার কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা। বাংলাদেশের বহু সাহিত্যিকের বই প্রকাশ পেয়েছে কলকাতা শহর থেকে। আজ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে এবং বঙ্গবন্ধুর ১০০ বছরে কলকাতায় তার প্রতিফলন ঘটবে, এটা আশা করেছিলাম।” আবার কলকাতার সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তীও একইভাবে নিজের আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি বললেন, “বাংলা সাহিত্য মানে দুই পার মিলিয়েই। কলকাতা বইমেলাতেও বারবার তার প্রকাশ পাওয়া যায়। আর এমন একটা ঐতিহাসিক বছরকে মনে রাখতে বইমেলার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।” পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের মাথায় বাংলাদেশে ধর্মের অজুহাতে একের পর এক বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তিনিও।
বইমেলা হচ্ছেই, এই বিশ্বাস এখনও বেঁচে আছে। আর তার সঙ্গেই আবারও ইতিহাসের স্পর্শ পেতে চলেছে বাঙালি। যে ইতিহাস তার জীবনের সঙ্গে প্রোথিত।
Powered by Froala Editor