আফ্রিকার পশ্চিমে নউকট শহর, বছর দশেক আগেও সেখানে দৃশ্যটা বেশ জমজমাট ছিল। সাহারা মরুভূমির মাঝে আস্ত এক মরুদ্যান ছিল মউরিটানার এই শহরটিতে। সামান্য কৃষিকাজও হত। কিন্তু দেখতে দেখতে বদলে যাচ্ছে দৃশ্য। বর্তমানে সেখানে মানুষের দেখা মেলাই শক্ত। যাঁরা থাকেন, মার্চ মাস থেকেই মাটি খুঁড়তে শুরু করে দেন প্রতি বছর। কারণ মাটির নিচে উষ্ণতা তবু কিছুটা কম থাকে। এমনিতে গ্রীষ্মকালে শহরের উষ্ণতা পৌঁছে যায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। আর এই উষ্ণায়ন সহ্য করতে না পেরেই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মানুষ। সেই জায়গা গ্রাস করে নিচ্ছে মরুভূমি (Desert)।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাহারা মরুভূমির আয়তন বেড়ে চলেছে প্রতি বছর। ১৯৫০ সাল থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন বেড়েছে সাহারার (Sahara)। মরুভূমির সীমানা দক্ষিণ দিকে কিছুটা এগিয়েছে ঠিকই। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার সীমানার মধ্যেই। মরুভূমির মধ্যে থাকা মরুদ্যানগুলি এক এক করে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। ঠিক তেমনই অবস্থা নউকট শহরেরও। এই শহরের বেশিরভাগ মানুষেরই জীবিকা ছিল পশুপালন। কিন্তু পশুদের খেতে দেবেন কী? সামান্য কয়েক দানা শস্যও যে আর জন্মায় না। কয়েক বছর একটানা হয়তো বৃষ্টিই হয় না। এই অবস্থায় গবাদি পশুদের কাগজ এবং কার্ডবোর্ডের টুকরো খাওয়ানো অভ্যাস করাচ্ছেন পশুপালকরা। প্রথম প্রথম আপত্তি জানালেও তারা ক্রমশ মেনে নিয়েছে সেই বন্দোবস্ত। কিন্তু শহরের মানুষগুলোও যে আর বদলে যাওয়া জলবায়ুর সঙ্গে লড়াই করতে পারছেন না।
১৯৫০ সালে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস ছিল নউকট শহরে। আর এখন সেই সংখ্যাটা নেমে এসেছে ১ হাজারেরও নিচে। প্রতি বছর কাতারে কাতারে মানুষ শহর ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন সমুদ্র উপকূলের উদ্দেশে। সেখানে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক। তাছাড়া মাছচাষে বেশ কিছু কর্মীও নিয়োগ করা হয় প্রতি বছর। কিন্তু যেভাবে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সেই জীবিকাও আর সুলভ নয়। প্রতিযোগিতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সাহারা মরুভূমির সম্প্রসারণ তাই গোটা আফ্রিকার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে বিগত কয়েক দশক ধরেই। এর মধ্যেই তার বাস্তব প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে জনজীবনে। এভাবে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত কতদিনই বা টিকে থাকতে পারবে মানুষ? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সাহারা মরুভূমির রহস্যময় চোখ – মহাকাশচারীদের ‘ল্যান্ডমার্ক’, নাকি গোপন শহরের ইঙ্গিত?