গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ কমছে সমুদ্রের জলতল! বিপরীত ছবি আইসল্যান্ডে

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে দ্রুত গলছে মেরু প্রদেশের বরফ। ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রের জলতল। ভাঙনের শিকার হচ্ছে উপকূলবর্তী অঞ্চল। গোটা বিশ্বজুড়েই মোটামুটি একই ছবি। তবে আইসল্যান্ডের (Iceland) উত্তর উপকূলের হফেন (Hofn) গ্রামের ছবিটা একটু ভিন্ন। জলতলের উচ্চতা (Sea Level Rising) বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমশ কমছে সমুদ্রের গভীরতা (Sea Depth)। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় নেমে যাচ্ছে জলতল। সম্প্রতি, প্রকাশ্যে এল এই বৈপরিত্যের কারণ। কিন্তু কেন ঘটছে এমন অদ্ভুত ঘটনা?

সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে, হফেন শহরের কথা বলে নেওয়া যাক। আইসল্যান্ডের মূল নগর সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন শহরগুলির মধ্যে অন্যতম হফেন। তার একটি কারণ এই গোটা অঞ্চলটিই অবস্থিত হিমবাহের ওপরে। ফলত, কয়েক শতাব্দী ধরেই এই অঞ্চলের মানুষদের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল শিকার, প্রধানত মৎস্যশিকারের ওপরেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই বদলে গেছে পরিস্থিতি। ক্রমশ জলতলের গভীরতা কমে যাওয়ায় উপকূলবর্তী সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার চলাচলই দায় হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে জলস্রোতের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় কমেছে মাছের সংখ্যাও। এই একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে গ্রিনল্যান্ডেরও বেশ কিছু অঞ্চলে। 

সম্প্রতি এই বিচিত্র ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই গবেষকরা আবিষ্কার করেন এর পিছনে দায়ী আদতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। সাধারণত আইস এজ বা হিমযুগের সময় থেকেই আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড-সহ আর্কটিক পরিধির মধ্যে অবস্থিত দেশগুলি ঢাক ছিল বিশালায়তন হিমবাহ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এই সকল হিমবাহগুলি। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে পৃথিবীর জলতলের উচ্চতা। 

তবে এতদিন এই বরফের চাদর এবং হিমবাহের ওজনের চাপেই অবনমিত ছিল গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডের নরম পলিমাটি। বর্তমানে বরফের চাপ সরে যাওয়ায় তা ক্রমশ ফুলে উঠছে আবার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতা বাড়ছে ভূমিতলের। কমছে সমুদ্রের গভীরতা। পাশাপাশি নাব্যতা হ্রাসের আরও একটি কারণও রয়েছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে। পদার্থবিদ্যা তথা অভিকর্ষ সূত্র অনুযায়ী, কোনো ভারি বস্তু সহজেই আকর্ষণ করে তরলকে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে বরফের পুরু চাদর এই একই ভূমিকা পালন করত। হিমবাহের অভিকর্ষজনিত আকর্ষণ বল উপকূলবর্তী অঞ্চলের সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়িয়ে রাখত। চাঁদের আকর্ষণ বলে যেভাবে জোয়ার সৃষ্টি হয়, এও অনেকটা তেমনই। বর্তমানে হিমবাহ গলে যাওয়ায় সেই আকর্ষণ বলেও ঘাটতি দেখা গেছে। 

আরও পড়ুন
পরিবেশ দূষণ রুখছেন নাইজেরিয়ার স্পাইডারম্যান

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর আইসল্যান্ডের বুক থেকে মুছে যাচ্ছে ১৭০ কোটি টন হিমবাহ। এই বিপুল পরিমাণ জল একদিকে যেমন সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি করছে। তেমনই ক্রমশ বাড়াচ্ছে আইসল্যান্ডের ভূমিতলের উচ্চতাও। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১.৭ সেন্টিমিটার করে উঁচু হচ্ছে হফেনের মাটি। গবেষকদের অনুমান, চলতি শতাব্দীর শেষেই গলে যাবে আইসল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ডের অধিকাংশ অঞ্চলের বরফ। ফলে, জীবিকাহীন হয়ে পড়বেন উপকূলবর্তী অসংখ্য মানুষ। সেইসঙ্গে গোটা পৃথিবীর জলতল বৃদ্ধি পেতে পারে ৭০ সেন্টিমিটার বা আড়াই ফুট। যা গোটা পৃথিবীর কাছেই এক বড়ো অশনিসংকেত…

আরও পড়ুন
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরিবেশ-বন্যপ্রাণের 'মৃত্যু'

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সামুদ্রিক খননে বাড়ছে পরিবেশদূষণ, জাতিসংঘের দরবারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র