সকালের সূর্য ওঠার আগেই আবর্জনার পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়ান অনেকে। সারারাত ধরে মুম্বাই শহর ও শহরতলি থেকে যাবতীয় আবর্জনা এসে জমা হয়েছে সেখানে। তবে সবই যে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো জিনিস নয়। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো বিক্রি করেই কিছু অর্থ ঘরে তোলা যেতে পারে। আর মাঝে মাঝে তো মোবাইল ফোনের মতো মূল্যবান জিনিসও পাওয়া যায়। মুম্বাইয়ের (Mumbai) শহরতলি দেওনারের (Deonar Dumping Ground) আবর্জনার স্তূপকে ঘিরে এভাবেই জীবিকা চলে কিছু মানুষের। অন্যদিকে এলাকায় দূষণেরও অন্যতম কারণ এই স্তূপ। আর তাই দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করার প্রশ্নে সরব পরিবেশকর্মীরা। অবশেষে সেই দাবিতে সাড়া দিল কেন্দ্র সরকারও। বলা হয়েছে, দেওনারের আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ফেলে সেখানে বর্জ্যপ্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা হবে।
ভারতের বৃহত্তম আবর্জনার স্তূপ রয়েছে দেওনারে। যার মোট আয়তন প্রায় ৩০০ একর। সমগ্র এলাকাটি দেখে মনে হয় ছোটোবড়ো অন্তত ৩ হাজার আবর্জনার পাহাড় রয়েছে সেখানে। যার এক একটির উচ্চতা ১২০ ফুটেরও বেশি। অর্থাৎ আশেপাশের ১৮-২০ তলা বাড়িগুলির সমান উচ্চতা এইসব আবর্জনার স্তূপের। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৯২৭ সালে মুম্বাই পৌর সংস্থার পক্ষ থেকে দেওনারের এই জায়গায় আবর্জনা ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে অনেকের মতে এই আবর্জনার স্তূপের বয়স আরও পুরনো। দেশের অন্যতম প্রাচীন বর্জ্যক্ষেত্রগুলির একটি এই দেওনার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই শহর ও শহরতলিতে জনসংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে দৈনিক বর্জ্যপদার্থের পরিমাণও। এখন প্রতিদিন অন্তত ৮০০ টন আবর্জনা ফেলা হয় এখানে। তবে বেশ কয়েক দশক ধরেই পরিবেশকর্মীরা এই স্তূপ পরিষ্কার করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ২৬ বছর ধরে মামলা চলছে আদালতে।
এর মধ্যেই ২০১৬ সালে দেওনারে ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। অকস্মাৎ আগুন লেগে যায় আবর্জনার স্তূপে। অবশ্য এমন ঘটনা একেবারে অস্বাভাবিক নয়। এখানে প্রতিদিন যাঁরা আবর্জনা কুড়োতে আসেন, তাঁরা প্রায়ই আগুন লাগিয়ে দেন। এর ফলে সাধারণ আবর্জনাগুলি পুড়ে গিয়ে মোবাইল ফোন বা বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুর জিনিস বেরিয়ে আসে। ২০১৬ সালের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল অনেকটা এলাকা জুড়ে। একটানা ২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। তবে এর পরেও সচেতনতা দেখা যায়নি। স্থানীয় পুরসভার তরফ থেকে বলা হয়েছিল, দেশের অন্যান্য ছোট শহরে যেভাবে বর্জ্যপ্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব, মুম্বাইয়ের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। অবশেষে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে পরিবেশকর্মীদের দাবির পক্ষে সওয়াল করা হল ঠিকই। কিন্তু এই বিরাট আবর্জনার স্তূপ ঠিক কীভাবে পরিষ্কার করা হবে, তাই নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
২২ বছর ধরে সমুদ্রের আবর্জনা পরিষ্কার করে চলেছেন বালির বৃদ্ধ