বন্যা, ভূমিকম্প, সুনামি, মহামারী এবং মৃত্যুমিছিল— ২০২০-তে বাদ পড়েনি কিছুই। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল জম্বিও। তবে স্বস্তির এটুকুই, এই জম্বি-রোগের সংক্রমণ হয়নি মানুষের মধ্যে। ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নতুন দুটি প্রজাতির ছত্রাকের অস্তিত্ব খুঁজে পান। এই ছত্রাক দুটির সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে মাছিদের মধ্যে। আর সংক্রমণের পর জম্বিদের মতোই আচরণ করছে মাছিগুলি।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেনমার্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম গবেষকরা যৌথভাবে চালিয়েছিলেন এই গবেষণা। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অফ ইনভার্টিব্রেট প্যাথলজি’ পত্রিকায়। সেখানেই উল্লেখিত হয় ‘স্ট্রংওয়েলসি টাইগ্রিনি’ এবং ‘স্ট্রংওয়েলসি এসেরোসা’ নামের দুই নতুন ছত্রাক প্রজাতির কথা। যারা মূলত ‘কোওনোসিয়া টাইগ্রিনা’ এবং ‘কোওনোসিয়া টেস্টেসিয়া’— এই দুই প্রজাতির ড্যানিস মাছিকেই সংক্রমিত করছে বলে নজরে এসেছে বিজ্ঞানীদের।
সাধারণত ছত্রাকের সংক্রমণে মৃত্যু হয় মাছির। তারপর মৃতদেহ থেকেই সেই সংক্রমণ ছড়ায় অন্য মাছিদের মধ্যে। তবে এক্ষেত্রে একেবারে অন্যরকম ঘটনা লক্ষ করেছেন গবেষকরা। তবে এই বিশেষ পরজীবী ছত্রাক দুটির সংক্রমণের পরও বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকে মাছিগুলি। এবং জীবিত বাহকের মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে এরা। মাছির তলপেটের অংশ থেকে ক্রমাগত নির্গত হতে থাকে ছত্রাকের স্পার। তবে নির্গত না বলে নিক্ষেপিত বলাই উপযুক্ত হবে এক্ষেত্রে। কারণ রকেটের মতো দ্রুত গতিতে মাছির শরীর থেকে বেরিয়ে আসে ছত্রাকের স্পার। তারপর তা সংক্রমিত করে অন্য মাছিকে।
তবে জীবিত থাকলেও স্বাভাবিক আচরণ করে না মাছিগুলি। তাদের দেহে অভ্যন্তরেই ডোপিং জাতীয় পদার্থের নিঃসরণ করতে থাকে ছত্রাকের প্রজাতি দুটি। যা ক্রমশ 'জম্বি' করে তোলে তাদের। অন্যদিকে খাদ্য হিসাবে ছত্রাকগুলি গ্রাস করে মাছির শরীরে উপস্থিত চর্বি এবং প্রজননের অঙ্গ। শরীরের ফ্যাট বা চর্বি শেষ হয়ে গেলে কয়েকদিন পর মারা যায় মাছিটি।
এই অদ্ভুত ঘটনায় তাজ্জব বনে গেছেন বিজ্ঞানীরাও। সংক্রমণের এই প্রক্রিয়াকে সক্রিয় হোস্ট ট্রান্সমিশন (এএইচটি) বলা হয়। ডেনমার্কের ওই দুটি প্রজাতির মাছির মোট জনসংখ্যার ৩-৫ শতাংশ এখনও অবধি আক্রান্ত হয়েছে এই অদ্ভুত রোগে। তবে কোন মাছিগুলি আক্রান্ত তা চিহ্নিত করাই দুষ্কর বিজ্ঞানীদের কাছে। পাশাপাশি দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ে এএইচটি সংক্রমণ। ফলে আপাতত এ পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনার কোনো উপায়ই জানা নেই বিজ্ঞানীদের...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আন্দিজ পর্বতমালায় খুঁজে পাওয়া গেল ২০টি হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি, উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা