পরিবেশ ও বিদ্যুৎ বাঁচাতে সৌরশক্তি-চালিত এসি, পথ দেখাচ্ছেন দিল্লির বিজ্ঞানী

চলতি বছরে মার্চ মাসেই উষ্ণতা ছাড়িয়ে চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি। ১৯০১ সালের পর ভারতের ইতিহাসে এটাই উষ্ণতম মার্চ মাস, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। স্বাভাবিকভাবে উষ্ণতা-বৃদ্ধির কারণে ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে এয়ার-কন্ডিশনার যন্ত্রেরও। বিশেষত ভারত, চিন এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে আগামী দু’দশকের মধ্যে এসির বিক্রি বাড়বে প্রায় তিনগুণ। এমনই জানাচ্ছে সমীক্ষা। কিন্তু এসির ব্যবহার পরোক্ষভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর হার। এবার এই সমস্যারই অভিনব সমাধানের পথ দেখাচ্ছেন দিল্লির তথ্য ও পরিসংখ্যান গবেষক। 

আশুতোষ ভার্মা (Ashutosh Varma)। দিল্লির এই তথ্য-বিজ্ঞানীর হাত ধরেই প্রথমবারের জন্য সৌরশক্তি চালিত এসি (Solar AC) এসেছিল ভারতের বাজারে। শুধু ভারতই নয়, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘এক্সঅল্টা’ সংস্থার নির্মিত এসি বর্তমানে রপ্তানি হচ্ছে গোটা বিশ্বে। তবে এই জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে। 

২০০৯ সাল সেটা। তখন একটি ছোটো বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন আশুতোষ। দিল্লির ভয়াবহ তাপপ্রবাহের হাত থাকে বাঁচতেই নিজের বাড়িতে এসি লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার খরচ বহন করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় তাঁর। সেই থেকেই আশুতোষ চিন্তাভাবনা শুরু করেন এসির বিদ্যুৎ-খরচ কীভাবে কমিয়ে এনে সাশ্রয়ী করে তোলা যায় তাকে। নতুন উদ্যমে শুরু করেন ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা। 

বছর খানেকের মধ্যেই এই জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করেন আশুতোষ। তৈরি করে ফেলেন সৌরচালিত এসির নীল-নকশা। সেই মতো প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে তৈরি করান একটি প্রোটোটাইপও। নিজের বাড়িতেই তিনি ব্যবহার করতেন সৌরশক্তিচালিত সেই এসি। প্রাথমিকভাবে সাফল্য মেলার পর, ব্যবসায়িকভাবে এই এসি বাজারে আনার পরিকল্পনা শুরু করেন তিনি। মাত্র ৮ লক্ষ টাকা মূলধন নিয়েই পথ চলা শুরু হয় ‘এক্সঅল্টা’-র।

তবে এক জায়গায় থেমে থাকেননি আশুতোষ ভার্মা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল এনেছেন তাঁর প্রযুক্তিতেও। বর্তমানে এসিতে সিএফসির মতো গ্রিন হাউস গ্যাসের বদলে লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তাঁর সংস্থা। তাতে কমছে পরিবেশদূষণও। পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার এসি পিছু কমিয়ে এনেছে প্রায় ৬০০ ইউনিট বিদ্যুতের খরচ। এই দিক থেকেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আনছে তাঁর সংস্থা। 

বিগত কয়েক বছরে ভারত, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়ার বাজারে গড়ে ৫ হাজারেরও বেশি এসি সরবরাহ করেছে ‘এক্সঅল্টা’। কোনো বদল ছাড়া প্রায় একটানা ২৫ বছর কর্মক্ষম হওয়ায়, উত্তরোত্তর বাড়ছে এই এসির চাহিদা। তবে এখন শুধু ‘এক্সঅল্টা’-ই নয়, তাঁর দেখানো পথে হাঁটা শুরু করেছে খ্যাতনামা নানা এসি প্রস্তুতকারক সংস্থাও। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই নতুন প্রযুক্তির পথিকৃৎ দিল্লির আশুতোষ ভার্মাই…

Powered by Froala Editor