রাজধানীর বুকেই ছোট্ট একটি কলোনি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২টি পরিবারের বাস সেখানে। তবে দিল্লির মধ্যে থেকেও গোটা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চল। বাইরে থেকে লোকজনের আনাগোনা সেখানে নেই বললেই চলে। সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দরাও একপ্রকার যেন নিষিদ্ধ বাইরের জগতে। তাঁদের জন্য চাকরির সুবিধা নেই কোনো, নেই আর পাঁচজনের মতো স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগও। ভিক্ষাবৃত্তিই তাঁদের একমাত্র জীবিকা। কেননা, তাঁরা সকলেই যে কুষ্ঠরোগে (Leprosy) আক্রান্ত।
হ্যাঁ, দিল্লির আনন্দ পর্বত এলাকার ছবিটা এমনই। একুশ শতকে দাঁড়িয়েও কুষ্ঠরোগীদের এক রকমভাবে অস্পৃশ্য করে রেখেছে সমাজ। তবে এই লড়াইতে একা নন তাঁরা। তাঁদের জন্যই লড়ে চলেছেন দিল্লিরই এক সমাজকর্মী— জয়া রেড্ডি (Jaya Reddy)। বলতে গেলে আনন্দ পর্বতের বাসিন্দাদের কাছে তিনি স্বয়ং দেবদূত। প্রশাসনিক কাজ থেকে শুরু করে, আর্থিক সাহায্য, চিকিৎসা এবং আক্রান্তদের পরিবারের শিশুদের পড়াশোনা করার জন্য বই সরবরাহ— সব কিছুর দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জয়া।
আজ থেকে কয়েক দশক আগের কথা। জয়া নিজেও শিকার হয়েছিলেন সমাজের এই বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার। খোদ জয়ার বাবা-মাই আক্রান্ত হয়েছিলেন কুষ্ঠরোগে। তা জানাজানি হতেই স্কুলে প্রায় এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। মিশত না স্কুলের বন্ধুবান্ধবরা। কথা বলতেন না শিক্ষকরাও। এমনকি হাসপাতালে বাবা-মায়ের ক্ষত ড্রেসিং করাতে নিয়ে গেলেও, কখনও কখনও ফিরিয়ে দিতেন খোদ চিকিৎসকরা। শৈশবের সেই স্মৃতি তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় আজও। সেই কলঙ্ক মুছতেই কুষ্ঠরোগীদের জন্য একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জয়া। চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন কুষ্ঠরোগীদের সেবায়। কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই। গান্ধীজিই তাঁর কাছে আদর্শ।
তবে আশার ব্যাপার এই যে, সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য হলেও সচেতনতা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই লড়াইতে সামিল হয়েছে রোটারি-সহ একাধিক জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এভাবেই ধীরে ধীরে সমাজের মানসিকতায় বদল আসবে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী জয়া রেড্ডি…
আরও পড়ুন
দিল্লি বিধানসভার নিচে ফাঁসিঘর! হারানো ইতিহাসের খোঁজ
Powered by Froala Editor