ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং-এর বিকল্প যন্ত্র আবিষ্কার গুরগাঁওয়ের স্কুল পড়ুয়াদের

২০১৩ সালে সার্বিকভাবে মানুষকে দিয়ে ময়লা পরিষ্কার নিষিদ্ধ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ৮ বছর কেটে গিয়েছে। অথচ বেশ কিছু সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে এখনও ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার বা মেথরের সংখ্যা ১৫ লক্ষের কম নয়। আর এই কাজে মৃত্যু পর্যন্ত হয় বহু মানুষের। এই সমস্যার সমাধানেই এবার অভিনব পদ্ধতি নিয়ে এল গুরগাঁওয়ের স্কুল পড়ুয়াদের একটি দল। শিব নাদার স্কুলের একাদশ শ্রেণির ৫ ছাত্র মিলে তৈরি করে ফেলেছে এমন এক যন্ত্র (Scavenging Machine), যাতে অতি সামান্য খরচে ম্যানহোল বা সেপটিক ট্যাঙ্কে না নেমেই পরিষ্কার করা যাবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই যন্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জাররা (Manual Scavenging) নিজেরাও ব্যবহার করতে পারবেন এই যন্ত্র। আর তার জন্য বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণেরও দরকার পড়বে না।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩ বছরে দেশে অন্তত ৯৪০ জন ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জারের মৃত্যু হয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যাটা তার চেয়ে আরও অনেকটাই বেশি হওয়ার কথা, এমনটাই জানিয়েছেন সমীক্ষকরা। পাশাপাশি দেশের লিঙ্গবৈষম্য এবং জাতিবৈষম্যের ছবিটিও তুলে ধরে এই সমীক্ষা। ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জারদের প্রায় প্রত্যেকেই তফসিলি জাতি ও উপজাতির সদস্য। আর তার মধ্যে ৭০ শতাংশই মহিলা। এই ছবিটাই বদলে দিতে চেয়েছে অংশ গুপ্তা, অনাভি কোঠারি, বাহার ধিংরা, পলক যাদব এবং সার্থক আচার্য। আর তাদের এই পরিকল্পনার সঙ্গে সমানে সঙ্গত দিয়ে গিয়েছেন শিব নাদার স্কুলের শিক্ষকরা। প্রতি বছর স্কুলের বার্ষিক সম্মেলনে পড়ুয়ারা নিজেদের তৈরি নানা উদ্ভাবনী বৈজ্ঞানিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং মডেল তৈরি করে। এবছর সেই অনুষ্ঠানের জন্যই এই মডেল তৈরি করেছে ৫ পড়ুয়া। আর অন্যান্য স্কুলের পরীক্ষকদের দিয়ে সেই মডেল পরীক্ষাও করানো হয়েছে। কারখানায় উৎপাদনের জন্য মডেলে কিছু সামান্য পরিবর্তনের কথা বলেছেন তাঁরা। তাছাড়া সম্পূর্ণ কাজটির প্রশংসা জানিয়েছেন সকলেই।

২০২০ সালের মার্চ মাসে, লকডাউনের কিছুদিন আগে এই মডেল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল পড়ুয়ারা। আর তারপর লকডাউনে নিজেদের বাড়িতে বসেই বাকি কাজ করতে হয়েছে। ফলে সময় লেগেছে অনেকটাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মডেল তৈরি হয়েছে। মাটির নিচের অন্ধকারে আবর্জনা শনাক্ত করার জন্য এলইডি আলোর পাশাপাশি এই যন্ত্রে আছে গ্যাস শনাক্তকরণের ব্যবস্থাও। ফলে ভ্যাকিউম চেম্বারে কতটা বিষাক্ত গ্যাস জমা হল, তাও বুঝতে পারবেন সাফাইকর্মীরা। সব মিলিয়ে যন্ত্রটি তৈরিতে খরচ পড়েছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মতো। তবে কারখানায় প্রস্তুত করতে গেলে খরচ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পড়ুয়ারা। যদিও একবার যন্ত্রটি কিনে নিলে ভবিষ্যতে আর কোনো বাড়তি খরচের প্রয়োজন নেই। এই আবিষ্কার যদি ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে, তাহলে তার থেকে সুখবর আর কিছুই হতে পারে না।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য ‘সংরক্ষিত’ সাফাইকর্মীর পদ? তথ্যের ইঙ্গিত সেদিকেই