হাসি ‘বিক্রি’ করেই শিশুদের মন সারান দিল্লির অধ্যাপিকা

কথায় আছে, ‘মন ভালো তো সব ভালো’। রবিন উহিলিয়ামসের ‘প্যাচ অ্যাডামস’ সিনেমাটার কথা মনে পড়ছে নিশ্চয়ই? আত্মহত্যার মুখ থেকে ফিরে এসে চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন প্যাচ। সাইকোলজিক্যাল থেরাপি নয়, বরং তাঁর চিকিৎসার হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল নিছক হাসি-মজা। রোগীদের শারীরিক হাল ফেরাতে জোকারের বেশে তাঁদের ‘কাউন্সিলিং’ শুরু করেছিলেন রবিন উইলিয়ামস অভিনীত প্যাচ অ্যাডামস চরিত্রটি। এবার সেই সিনেমার গল্পই যেন ফুটে উঠল বাস্তবে। তবে অকুস্থল ভার্জিনিয়া নয়, বরং ভারতের রাজধানী দিল্লি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে বাস্তবের প্যাচ অ্যাডামস হয়ে উঠেছেন দিল্লির (Delhi) তরুণী শীতল আগরওয়াল (Shital Agarwal)।

পেশায় একজন অ্যানথ্রোপোলজিস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা হলেও, প্রতিদিনই তাঁকে দেখা যায় এক ভিন্ন ভূমিকায়। মাথায় রঙিন পরচুলা, নাকে লাল রবারের বল লাগিয়েই তিনি বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। গন্তব্য, দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতাল। ঘণ্টা কয়েকের জন্য সেসব হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন শীতল। কখনও আবার তাঁদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন রাস্তাতেও। জোকারের ছদ্মবেশেই।

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগের কথা। ২০১৬ সাল সেটা। শারীরিক অসুস্থতার জন্য শীতলকে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে। ছোট্ট কেবিনে শয্যায় শুয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় তাঁর মনেও বাসা বাঁধে বিষণ্ণতা। সে-সময় তাঁকে মনস্তত্ত্বের অন্ধকার সেই অধ্যায় থেকে বের করে এনেছিলেন এক তরুণী। জোকারের ছদ্মবেশে তিনিই যেন নতুন করে সঞ্জীবনী প্রদান করেন শীতলকে। 

তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই পরবর্তীতে নিজে ‘মেডিক্যাল ক্লাউন’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন শীতল। খুলে ফেলেন আস্ত একটি সংস্থা ‘ক্লাউনসেলরস’ (Clownselors)। প্রাথমিকভাবে এই সংস্থার একমাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিজেই ‘মানসিক চাপ’-এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে ভলিন্টিয়ার হিসাবে এগিয়ে আসেন ভিন্ন ভিন্ন পেশার আরও বেশ কিছু মানুষ। 

আরও পড়ুন
ইহুদি যুবকটির হাসি সুন্দর; খুলিতে পাথর ভরে পেপারওয়েট বানালেন নাৎসি চিকিৎসক!

তবে এই লড়াই খুব কিছু সহজ ছিল না একেবারেই। প্রথমত, হাসপাতালে এই ধরনের কাজ করার জন্য সরকারের থেকে অনুমতি নিতে হয়েছিল শীতলকে। পাশাপাশি অন্যান্য ভলিন্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও তাঁকে করতে হয়েছে একা হাতেই। এসব কিছুর পর তাঁর অক্লান্ত এই পরিশ্রম একশো শতাংশ সফল, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। বর্তমানে শুধু হাসপাতালই নয়, বিভিন্ন অনাথ আশ্রম, বস্তি এমনকি বৃদ্ধাশ্রম থেকেও মাঝেমধ্যে ডাক আসে ‘ক্লাউনসেলারস’-এর। সেইসঙ্গে সমান তালে চলছে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার প্রচেষ্টা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও বর্তমানে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর দিকে। ফলে খানিকটা হলেও যেন সহজ হয়েছে পরিস্থিতি। আর তাই পরবর্তীকালে অধ্যাপনা ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে ‘মেডিক্যাল ক্লাউন’-এর ভূমিকাতেই নামার কথা চিন্তাভাবনা করছেন শীতল। ক’জনই বা পারেন সবকিছু ছেড়ে এভাবে মানুষের দুঃসময়ের সঙ্গী হয়ে উঠতে? 

আরও পড়ুন
হলুদ রং, হাসিমুখ ও ‘এনার্জি সিক্রেট’ – স্মাইলির জন্ম ও বিশ্বজয়ের ইতিহাস

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মোনালিসার হাসি কীভাবে এঁকেছিলেন ভিঞ্চি? পাঁচ শতক পরে সমাধান রহস্যের

Latest News See More