প্রথাগত পড়াশোনায় ইতি টেনে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, আশা দেখাচ্ছেন দিল্লির প্রবীণ নায়ক

প্রায়শই সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় নাম দেখা যায় দিল্লির গাজিয়াবাদের (Gaziabad)। ভারতের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম গাজিয়াবাদ। তবে শুধু দূষণই নয়, গাজিয়াবাদের এই প্রকাণ্ড আবর্জনার পাহাড় প্রতিনিয়ত প্রাণ নেয় কোনো-না-কোনো মানুষের। আবর্জনার কারণে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব তো সারাবছর লেগেই থাকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে। তাছাড়াও কখনও অগ্নিকাণ্ড, কখনও আবার আবর্জনার স্তূপে ধ্বস— দুর্ঘটনাতেও মৃত্যু হয় বহু সাফাইকর্মীর। 

বছর কয়েক আগে এমনই এক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন দিল্লির তরুণ প্রবীণ নায়ক (Praveen Nayak)। তখন তিনি প্রযুক্তিবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ থেকে ফেরার পথে, প্রবীণ চোখের সামনে খসে পড়তে দেখেছিলেন আবর্জনার পাহাড়। আর সেই আবর্জনার স্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ৪ ব্যক্তি। এই আবর্জনা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস বাছাই এবং সংগ্রহ করাই তাঁদের কাজ। 

এই মর্মান্তিক ঘটনাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল প্রবীণকে। সত্যিই কি এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই? ক্রমবর্ধমান এই আবর্জনার স্তূপের বৃদ্ধিকে কি আটকানোর উপায় নেই কোনো? হ্যাঁ, আছে বৈকি, এই স্তূপে জড়ো হওয়ার আগেই যদি আবর্জনার পৃথকীকরণ করা যায়— তবে অনেকটা হলেই সাফাইকর্মী কিংবা বর্জ্যসংগ্রাহকদের আনাগোনা কমবে আর্বজনার স্তূপে। কমবে প্রাণহানির আশঙ্কাও। 

এ চিন্তাভাবনা থেকেই, পড়াশোনায় ইতি টেনে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের নতুন প্রকল্প শুরু করেন প্রবীণ। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সমর্থন ছিল না। ব্যাপারটাকে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন পাড়া-প্রতিবেশীরাও। তবে পিছিয়ে আসেননি প্রবীণ। বরং, দিল্লির শহর থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা শুরু করেছিলেন তিনি। দুটি অটোরিক্সাকে বদলে ফেলেছিলেন ‘গারবেজ অ্যাম্বুলেন্স’-এ। শহরের রাস্তার ধারে পড়ে থাকা পুনর্ব্যবহারযোগ্য আবর্জনা এই ‘অ্যাম্বুলেন্স’-এ করেই সংগ্রহ করতেন তিনি। তারপর তাদের পাঠানো হত প্রক্রিয়াকরণের জন্য।

২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় তাঁর এই প্রকল্প। নিজের সামান্য সঞ্চয় এবং স্ত্রী-এর অলঙ্কার বিক্রি করেই গড়ে তোলেন আস্ত একটি সংগঠন— ‘গারবেজ ক্লিনিকস’। শুধু বর্জ্য সংগ্রহই নয়, বর্তমানে প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও রয়েছে এই সংস্থার। বর্জ্য সংগ্রহের জন্য রয়েছে ১৮টিরও বেশি ‘অ্যাম্বুলেন্স’। কর্মীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে পঞ্চাশের গণ্ডি। এমনকি বর্তমানে এই সংস্থার বার্ষিক টার্নওভার দেড় কোটি টাকা। 

প্রবীণের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন দরিদ্র সাফাইকর্মীদের স্থায়ী উপার্জনের পথ দেখাচ্ছে, তেমনই দূষণ প্রতিরোধেও তার অবদান অনস্বীকার্য। অন্যদিকে পরোক্ষভাবে গাজিয়াবাদ স্তূপে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর সম্ভাবনাও কমছে বলেই দাবি দিল্লির তরুণ উদ্যোগপতির…

Powered by Froala Editor

More From Author See More