চারিদিকে অক্সিজেনের হাহাকার। করোনা আক্রান্ত রোগীরা যেমন আছেন, তেমনই আছেন অন্যান্য নানা রোগীরাও। কারোর জন্যই জীবনদায়ী গ্যাসটির জোগান নেই। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা দেশের রাজধানী দিল্লি শহরে। এবার কোনোরকম সরকারি সাহায্যের প্রত্যাশা না করে এগিয়ে এল দিল্লির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াও এই কেন্দ্রদুটি থেকে অন্যান্য হাসপাতালেও অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতা গতবছরের সমস্ত ছবিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। দেশের কোনো হাসপাতালেই যথেষ্ট শয্যা নেই। ফলে গুরুতর অবস্থা ছাড়া রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আর কোভিড ছাড়া অন্যান্য রোগীরা প্রায় জায়গাই পাচ্ছেন না। দিল্লির চিকিৎসকদের মতে, কোভিড রোগী ছাড়া একমাত্র তাঁদেরই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে, হাসপাতালের বাইরে যাদের চিকিৎসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অর্থাৎ প্রায় মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। সেটা হার্টের সমস্যা হোক বা সেরিব্রাল স্ট্রোক, প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন অক্সিজেন। আর কোভিড রোগীদের উপশমের জন্য অক্সিজেন ছাড়া বিকল্প তো নেইই। অথচ দিল্লি শহরে একটিও সক্রিয় অক্সিজেন জেনারেটর নেই। অন্যান্য রাজ্যও এই সময় নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে দিল্লিকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে রাজি নন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বিএলকে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল এবং ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্রান্স থেকে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ও সিলিন্ডার রিফিলিং যন্ত্র আমদানির ব্যবস্থা করেছে। এই দুই ইউনিট চালু হলে দুই হাসপাতালের নিজস্ব অক্সিজেনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দৈনিক ৫০-৬০টি সিলিন্ডার অন্যান্য হাসপাতালেও পাঠানো যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জীবনদায়ী অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাই চিকিৎসকদের বাছবিচার করতে হচ্ছে। যাঁদের অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক, তাঁরা অক্সিজেন পাচ্ছেন। বাকিরাও হয়তো অক্সিজেন ছাড়া বাঁচবেন না। কিন্তু উপায় কী? আবার একেবারে মৃত্যুর মুখে পৌঁছে গিয়েছেন যে রোগী, হয়তো তিনিও একটু অক্সিজেন পেলে বেঁচে উঠবেন। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা, কারণ অন্য একজনের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকদের কাছে পুরো কাজটাই রীতিমতো অমানবিক হয়ে উঠছে। দিল্লি শহরের নিজস্ব অক্সিজেনের জোগানের এই পদ্ধতি কিছুটা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে। আপাতত সেটুকুই আশার আলো চিকিৎসক থেকে রোগী, সকলের কাছেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কোভিড-যুদ্ধে হায়দ্রাবাদের সাইক্লিস্টরা; দু’চাকায় ভর করেই পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন, ওষুধ