তিহার জেলের সমস্ত বন্দিকে প্রতিষেধক দেওয়ার নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টের

অবিলম্বে তিহার জেলের ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রত্যেক বন্দিকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বুধবার জেল কর্তৃপক্ষকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দির বসবাস এই তিহার জেলে। ইতিমধ্যে সেখানেও করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করেছে। অথচ বন্দিদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি উদাসীন বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দুই বন্দি। জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এই দুই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতেই তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশিকা পাঠাল দিল্লি হাইকোর্ট।

বিচারপতি প্রতিভা সিং-এর বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছে, এই নোটিশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিহার জেল কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ভ্যাকসিনের জন্য আবেদন জানাবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়, ১৫ দিন থেকে একমাসের মধ্যে যেন প্রয়োজনীয় সমস্ত ভায়াল পৌঁছে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে এই নোটিশের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছে তিহার জেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিচারপতি প্রতিভা সিং প্রশ্ন তুলেছেন, ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক বন্দিদের জন্য যে সমস্ত ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছিল, তা ঠিকঠাক প্রয়োগ করা হয়নি কেন? এক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক ১৩৬ জন বন্দির মধ্যে মাত্র ১২ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। বাকিরা হয় কুসংস্কারের বশে প্রতিষেধক নিতে চাননি। অথবা তাঁদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় আধার কার্ড বা প্যান কার্ড নেই। এক্ষেত্রে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিষেধকের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে জেল কর্তৃপক্ষকেই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যেসমস্ত বন্দির আধার বা প্যান কার্ড নেই তাঁদের জেলের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের ভিত্তিতেই নাম নথিভুক্ত করা যাবে। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মে মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

২০১৫ সালে ‘পিঁজরা তোড়’ নামের সংগঠনের মধ্যে দিয়ে দিল্লি শহরে নারীবাদী আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন নাতাশা নরওয়াল এবং দেবাঙ্গনা কালিতা। ২০২০ সালের মে মাসে নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকেই তিহার জেলে আছেন তাঁরা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বন্দিদের দুরাবস্থা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন জেলের মধ্যেই। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বিচারপতি প্রতিভা সিং বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়দের অনলাইন যোগাযোগ তৈরি করারর বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এক্ষেত্রে নিয়মের জটিলতা যতটা কমিয়ে আনা যায়, সেই নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। তিহার জেল সংক্রান্ত এই রায় দেশের অন্যান্য কারাগারেও প্রয়োগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একের পর এক খুন, জেল ভাঙার ‘কৃতিত্ব’; কেন আত্মসমর্পণ করলেন ‘বিকিনি কিলার’?