পরিত্যক্ত ফুল দিয়ে সুগন্ধী, উদ্যোগ দিল্লিতে

নানা ভাষা, নানা ধর্ম, নানা মতের দেশ ভারত। তবে প্রায় সমস্ত সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ফুলের ব্যবহার। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোক বা বিবাহ কিংবা অন্নপ্রাসনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান – ফুল ছাড়া কোনোকিছুই সম্পূর্ণ হয় না। ব্যবহারের পর সেইসব ফুল কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্য আর মাথা ঘামান না কেউই। বেশিরভাগ ফুলই বিভিন্ন জলাশয়ে মিশে দূষণ ঘটায়। এর মধ্যেই দিল্লির হংসরাজ কলেজের উদ্যোগে দূষণ প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিত্যক্ত ফুল (Floral Waste) পুণর্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে প্রোজেক্ট মেহর। আর এই কাজের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে শহরের রূপান্তরকামী মানুষদের।

বেশ কিছু পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ টন ফুল আবর্জনা হিসাবে ফেলে দেওয়া হয়। আর প্লাস্টিকের পরেই জলদূষণের সবচেয়ে বড়ো কারণ এই ফুলগুলি। মোট জলদূষকের ১৬ শতাংশই হল পরিত্যক্ত ফুল। তবে এই দূষণ প্রতিরোধ নিয়ে আজও উদাসীন অনেকেই। হংসরাজ কলেজের এই উদ্যোগ সেই দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা যমুনা নদী সহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে ফুলের আবর্জনা সংগ্রহ করে এনে তাই দিয়ে তৈরি করছেন প্রাকৃতিক সুগন্ধী দ্রব্য। ৫ লিটার ভেষজ তেলে ২০০ গ্রাম ফুল ভিজিয়ে রেখে তৈরি হয় ‘ফ্লোরাল পটপৌরি’। ঘরের এক কোণে এই কাঁচের বয়ম রেখে দিলে সেই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ঘরে।

আপাতত দুটি পৃথক গন্ধের পটপৌরি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একটি শুধু গাঁধা ফুলের। আর অন্যটি গাঁধা এবং গোলাপ ফুলের মিলিত সুবাসযুক্ত। এই কাজের কর্মী নির্বাচনের কাজটিও বেশ ভেবেচিন্তেই শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শহরের রূপান্তরকামী মানুষদের বেছে নিয়েছেন তাঁরা। আজও সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার তাঁরা। তাঁদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও খুব একটা সহজ নয়। লিঙ্গবৈষম্যের এই বাস্তবতার বিরুদ্ধেও লড়তে চায় হংসরাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই রূপান্তরকামী মানুষদের সামাজিক মেলবন্ধনের পাশাপাশি তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে প্রোজেক্ট মেহর। এখনও অবধি উদ্যোগটি বেশ ছোটো। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার তাৎপর্য অস্বীকার করার জায়গা নেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বাড়ি, উদ্যোগ আমেরিকায়