স্ন্যাকস থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস— দিল্লির আব্দুল কাদিরের ট্যাক্সিতে মেলে সবকিছুই

অ্যাপ থেকে বুক করেছিলেন ট্যাক্সি (Cab)। সময়মতো দোরগোড়ায় এসে হাজিরও হয়েছে গাড়ি। তবে ক্যাবের ভেতরে ঢুকে বসতেই অবাক হওয়ার পালা। এ কোথায় এসে পড়লেন আপনি। ব্যাকসিটের সামনে বেশ কয়েকটি তাকে সার দিয়ে সাজানো রয়েছে নানান ধরনের চকোলেট, ক্যান্ডি, চিপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্ন্যাকস, কোল্ড ডিঙ্কস, লস্যি, খবরের কাগজ, বই এমনকি নেলপলিশ রিমুভার! এ যেন সাক্ষাৎ এক চলমান দোকান!

ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দিল্লিতে হঠাৎ করেই দেখা পেতে পারেন এমনই অভিনব এক ট্যাক্সির। আর এই অদ্ভুত ট্যাক্সির নেপথ্যে রয়েছেন ট্যাক্সিচালক আব্দুল কাদির (Abdul Qadeer)। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই দিল্লির পথে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন আব্দুল। তবে এই পথে তাঁকে আসতে হয়েছিল বাধ্য হয়েই। প্রাথমিকভাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল এক জন বিজনেস ম্যানেজার হিসাবে। কাজ করতেন দিল্লিরই একটি টেক্সটাইল কারখানায়। ৩০ বছর বয়সে সেই চাকরি হারান আব্দুল। তারপর থেকেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রাম। কখনও ফেরি করেছেন, কখনও আবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন খবরের কাগজ। শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সিচালকের ভূমিকাকেই জীবিকার পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন আব্দুল। 

গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকেই আব্দুল দেখেছেন, বিভিন্ন সময় অদ্ভুত সব সমস্যার মধ্যে পড়েন যাত্রীরা। সামান্য সেফটিপিন, স্ট্যাপলার কিংবা ব্যান্ডএইড গাড়িতে থাকলে সহজেই সমাধান পাওয়া যায় সেইসব সমস্যার। প্রথমের দিকে এইসব সাধারণ জিনিসই গাড়িতে রাখা শুরু করেছিলেন আব্দুল। ক্রমে বাড়তে থাকে তাঁর বৈচিত্রময় ভাণ্ডার। শিশুদের জন্য লজেন্স থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্ন্যাকস, মহিলাদের জন্য নেলপালিস রিমুভার, লিপবাম— এসব কিছুই গাড়িতে মজুত করেন তিনি। সঙ্গে রাখেন প্রতিদিনের একাধিক সংবাদপত্র এবং নানান পত্রিকা। যাত্রীদের আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে তাঁর। 

না, এইসব পরিষেবার জন্য আলাদা করে একটিও পয়সা বেশি খরচ করতে হয় না যাত্রীকে। এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই। তবে অনেক যাত্রীই ভাড়ার বাইরেও থেকে বাড়তি অর্থ তুলে দিতেন আব্দুলের হাতে। ইচ্ছে না থাকলেও একটা সময় জোর করেই তা নিতে হত তাঁকে। বর্তমানে সেই সমস্যারও অভিনব সমাধান খুঁজে দিয়েছে তাঁর ছোট্ট মেয়ে। বাবার গাড়ির ভেতরে লাগিয়ে দিয়েছে ছোট্ট একটি ডোনেশন বক্স। যাত্রীরা বাড়তি অর্থ দিতে এলে, এই বাক্সেই তা জমা করতে বলেন আব্দুল। পরবর্তীতে দরিদ্র মানুষদের কাছে সেই অর্থে সাহায্য পৌঁছে দেন তিনি। সবমিলিয়ে তাঁর এই অদ্ভুত পরিষেবা কুর্নিশ জানানোর মতোই…

Powered by Froala Editor