ড্রাগ মাফিয়ার দৌরাত্ম্যে ফুরোচ্ছে জঙ্গলের আয়ু, অস্তিত্বরক্ষার লড়াই কলম্বিয়ার প্রাচীন জনগোষ্ঠীর

একদিকে ইকুয়েডর, অন্যদিকে কলম্বিয়া। আর এই দুই দেশের মধ্যে ছোট্ট প্রদেশে সুকুম্বিয়া। যাকে মাঝ বরাবর ভাগ করে দিয়ে গেছে সীমান্তরেখা। এই প্রদেশেই বসবাস প্রাচীন সিওনা জনগোষ্ঠীর। যারা পারতপক্ষে দুই দেশেরই নাগরিক। এই অঞ্চলের আদিম চিরহরিৎ অরণ্যের ওপর নির্ভর করেই জীবনধারণ করেন তাঁরা। তবে ড্রাগ মাফিয়া আর বননিধনের কারণে অবলুপ্ত হতে বসেছে সেই অরণ্যের জন্যই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

সুকুম্বিয়া অঞ্চলে বেশ কয়েক দশক ধরেই চলছে ড্রাগ মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। এই অঞ্চলের উর্বর মাটিতে কোকা গাছ বৃদ্ধি পায় খুব দ্রুত। ফলে কোকা চাষের জন্য কলম্বিয়া অন্তর্গত বুয়েনাভিস্তা অঞ্চলকেই বেছে নিয়েছে গ্রাফ মাফিয়ারা। অন্যদিকে ইকুয়েডর অন্তর্গত উইসুয়া অঞ্চলে সেই কোকার প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। ছোটো ছোটো মোবাইল ভ্যানের মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে কোকেনের ল্যাবরেটরি। 

তবে বিগত কয়েক বছরে প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কোকার চাষ। বিশেষ করে এই লকডাউনে তা আকাশ ছুঁয়েছে। আর কোকার চাষের জন্যই জমির প্রয়োজনে চলছে নির্দ্বিধায় বননিধন। এই বৃক্ষচ্ছেদনের প্রতিবাদ করতে গেলেই সশস্ত্র মাফিয়ারা প্রাণ পর্যন্ত নিতে পিছপা হয় না বিন্দুমাত্র। তবে শুধু যে ড্রাগ চক্রই চলছে সুকুম্বিয়া প্রদেশে, তেমনটা নয়। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে বে-আইনি তৈল খনন। যা পারতপক্ষে জ্বালানি জোগাচ্ছে কোকেন তৈরিতে।

এছাড়াও ড্রাগ তৈরিতে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থও ফেলা হচ্ছে সুকুম্বিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদীতে। ফলে দূষিত হচ্ছে সেই জলও। অথচ পান করা থেকে অন্যান্য যে কোনো কাজ— এই জলের ওপরেই নির্ভর করেন আদিম অধিবাসীরা। সরকারের তরফে এখনও পানীয় জল সরবরাহের কোনো ব্যবস্থাই করে দেওয়া হয়নি তাঁদেরকে।

শূন্য দশকে গোড়ার দিক থেকেই জঙ্গলকে সুরক্ষিত করছে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন সিওনা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সরকারের কাছে বারবার দ্বারস্থ হয়ে ২০১০ সালে কুয়িম্বা অরণ্যের ১ লক্ষ হেক্টর অঞ্চল সংরক্ষণ করতেও সমর্থ হয়েছিলেন তাঁরা। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেই জঙ্গল রক্ষা দায়িত্ব ছিল সিওনা গোষ্ঠীর মানুষদেরই। তবে তারপরই শুরু হয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ। ২০১৮ সালে অরণ্যের নিরাপত্তার দায়ভার তাঁদের থেকে কার্যত ‘কেড়ে’ নেয় সরকার। 

তবে এর পর উন্নতি হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশ সঙ্গিন হয়ে উঠেছে অরণ্যের স্বাস্থ্য। সরকারের নিযুক্ত প্রহরী এবং আধিকারিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েই কাজ করে যাচ্ছে মাফিয়ারা। ফলে সংরক্ষিত অরণ্যের আয়তনও হ্রাস পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। ২০১৮ সাল থেকেই ক্রমাগত সরকারের কাছে আবেদন করে আসছে সিওনা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সেইসঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন ইন্টার আমেরিকান কমিশন অফ হিউম্যান রাইটসও। তবে কলম্বিয়া এবং ইকুয়েডর দুই দেশেরই প্রশাসনিক কর্তাদের থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো সাড়াই পাননি আদিম ভূমিপুত্ররা...

আরও পড়ুন
ছাই হয়ে গেছে অরণ্য, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই ইন্দোনেশিয়ার প্রাচীন জনগোষ্ঠীর

Powered by Froala Editor