দরজা দিয়ে চেম্বারে প্রবেশ করেই দেখলেন টেবিলের উল্টোদিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে রয়েছেন স্বল্পবয়সী এক যুবতী। হ্যাঁ, তিনিই চিকিৎসক। বেশ কিছু প্রশ্ন করার পর, রোগীকে বিছানায় শুতে বললেন তিনি। তারপর তিনি এগিয়ে এলেন বিছানার দিকে। না, হেঁটে নয়। স্বয়ংক্রিয় হুইলচেয়ারই তাঁকে পৌঁছে দিল রোগীর কাছে।
এমন দৃশ্যের সাক্ষী হলে যে কেউ অবাক হবেন, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। ডঃ ফাতিমা আসলা (Dr. Fatima Asla)। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন কেরলের এই তরুণ চিকিৎসক।
জন্মের তিন দিন পরেই তাঁর শরীরে ধরা পড়েছিল এক বিরল রোগ। অস্টিওজেনেসিস। আর এই রোগের কারণেই চলচ্ছক্তি হারায় ফাতিমার কোমরের নিচের অংশ। পাশাপাশি সাধারণের তুলনায় তাঁর শরীরের অন্যান্য সমস্ত হাড়ও বেশ খানিকটা ভঙ্গুর। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ছোটো থেকেই সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয়েছে হুইলচেয়ারের ওপরে। তবে এই প্রতিবন্ধকতা, অসুস্থতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর কাছে। দৃঢ় পায়েই চড়াই ভেঙেছেন কেরলের তরুণ চিকিৎসক।
না, কোনো বিশেষ স্কুলে পড়াশোনা করেননি ফাতিমা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর মা তাঁকে স্কুলে পৌঁছে দিলেও, তারপর একাই তিন চাকার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে হাজির হতেন ফাতিমা। পরবর্তীতে আর পাঁচজন স্বাভাবিক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কোট্টায়ামের এনএসএস মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকেই তিনি স্নাতকতা করেন হোমিও মেডিসিন এবং সার্জারিতে। বর্তমানে এই হাসপাতালেই একজন সফল সার্জেন হিসাবে কর্মরত ২৬ বছর বয়সি চিকিৎসক।
তবে ঝড় কম যায়নি তাঁর ওপর দিয়ে। বর্তমানে অক্ষমতা গ্রাস করেছে তাঁর শরীরের ৬৫ শতাংশ অংশকে। হয়েছে ৬টি সার্জারি। তবুও হাসি মুখেই তিনি লড়াই করে চলেছেন জীবনের সঙ্গে। চিকিৎসার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ঘুরে ফেলেছেন গোটা ভারত। অবশ্য এই কৃতিত্বের ভাগীদার তাঁর স্বামীও।
২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর আত্মজীবনী, ‘নীলাভুপোল চিরিকুন্না পেনকুট্টি’। যার ইংরাজি অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘এ গার্ল উইথ টুইলাইট স্মাইল’। হ্যাঁ, টুইলাইট স্মাইলই বটে। হাসিমুখেই জীবনযুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রেরণা…
Powered by Froala Editor