“ভাগ হল পাঁচ
দুই, দুই, এক
বাবা আর ছেলে
দুই আর দুই
এক জুটল মায়ের কপালে।”
এমন লেখার কাছে চুপ করে বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। সাবলীল ভাষার বুননে যেন আঁকা হয়েছে এই কবিতা। তবে এই শব্দবিন্যাসের পিছনে লুকিয়ে থাকা মানুষটাকে হয়তো চেনেন না অনেকেই। অনমিত্র রায় (Anamitra Roy)। সমকালীন বাংলা সাহিত্য এবং ছোটো পত্রিকার জগতে যাঁদের আনাগোনা— তাঁদের কাছে অনমিত্র এক বিস্ময়ের নাম। যাঁর সাবলীল গদ্য-কবিতা, চিন্তন, মনের জগৎ রীতিমতো অবাক করার মতোই।
তবে শুধু সাহিত্যরচনাই নয়, অবাক করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের লড়াই-ও। হ্যাঁ, লড়াই-ই বটে। সেটা নব্বইয়ের দশকের কথা। তখনও স্কুলপড়ুয়া অনমিত্র। এক বিরল স্নায়বিক রোগ ধরা পড়েছিল তাঁর শরীরে। চেষ্টার খামতি ছিল না কোনো। তবে সাড়া মেলেনি কোনো চিকিৎসাতেই। বরং, ধীরে ধীরে জড়তা দানা বেঁধেছে শরীরে। স্বপ্ন ছিল, একদিন জ্যোতির্বিদ হয়ে আকাশ ছোঁবেন তিনি। সেই স্বপ্নও অধরা রয়ে গেছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। ইংরাজি সাহিত্য হয়ে ওঠে তাঁর উচ্চশিক্ষার বিষয়।
বলতে গেলে সেইসময় থেকেই বাংলা সাহিত্যের জগতেও বিরাজমান অনমিত্র। ১৯৯৮ সালে প্রকাশ পেয়েছিল অনমিত্রের প্রথম বই তথা কাব্যগ্রন্থ ‘অব্যয় জীবন’। তারপর নক্ষত্রপুঞ্জ (২০০২), চাঁদ ধরার মইসিঁড়ি (২০১৪), ইশকুলবেলা (২০১৪), বইশালের বণিক (২০১৯), অন্য রেখায় যাব (২০২২)… বাঙালি পাঠকদের ভিন্ন স্বাদের গদ্য ও কবিতার সন্ধান দিয়েছেন অনমিত্র। সেইসঙ্গে বাংলার নানান পত্রপত্রিকাতেও ধারাবাহিকভাবে লেখালিখি করে আসছেন তিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, অনমিত্রের লেখায় বিষাদের মেঘ নেই কোনো। নেই হা-হুতাশ। সমস্ত অসুস্থতাকে ফুৎকারে উড়িয়ে নিজের লেখায় জীবনের উদযাপন করে চলেছেন বাঙালি কবি।
তবে শুধু কবি বলে অনমিত্রের পরিচয় দিলে বোধ হয় ভুল হয় খানিক। পেশাগতভাবেও তিনি সাধনা করছেন বাংলা সাহিত্যের। প্রুফ রিডিং, সম্পাদনার মতো কাজের সঙ্গে জড়িত একাধিক সংস্থায়। অনমিত্রের ব্যক্তিগত জীবনেও সবচেয়ে বড়ো বন্ধু বই। শুধু পড়াই নয়, বই-এ সামান্য মুদ্রণের ভুল চোখে পড়লেও অভ্যেসবশত তা শুধরে দেন অনমিত্র।
আগামীকাল তাঁর জন্মদিনেই ‘উলুখড়’ প্রকাশনা থেকে প্রকাশ পেতে চলেছে তাঁর সপ্তম বই ‘সোনালি ধানের শীর্ষ’। অনমিত্রের গদ্যের সঙ্গে এই বইয়ের বাড়তি পাওনা শিল্পী দেবাশিস দেবের অলংকরণ। এই বইপ্রকাশ উপলক্ষে কলেজ স্ট্রিটের বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দে’জ-এর বিপণিকক্ষে আগামীকাল আয়োজিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। হাজির থাকবেন স্বয়ং অনমিত্র। গল্প-কথায় উঠে আসবে ফেলে আসা দিনের কথা, নব্বইয়ের সাহিত্যজগতের নস্টালজিয়া। সেই আড্ডার স্বাদও অনমিত্রের মতো প্রাণোচ্ছ্বল, সাবলীল হবে— তাতে আর সন্দেহ কী?
Powered by Froala Editor