আজ থেকে ২৩ বছর আগের কথা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯ বছর। আকস্মিক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সাধারণ ফ্লু-এর মতোই উপসর্গ ছিল। ফলে, সাময়িক এই অসুস্থতাকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি তাঁর বাবা-মাও। পরবর্তীতে যখন চিকিৎসা শুরু হয়, তখন দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই। চিকিৎসকরা নিদান দিয়েছিলেন তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ২ শতাংশ।
কথা হচ্ছে, তিনবারের প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়ন অ্যামি পার্ডিকে (Amy Purdy) নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্যারাস্নোবোর্ডার-এর উত্থান ও লড়াই-এর কাহিনি হার মানায় যে-কোনো চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটকেও।
অ্যামি আদতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে। দ্রুত রক্তের মধ্যে দিয়ে সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর গোটা দেহে। হারিয়েছিলেন দুই পা, কিডনি এবং প্লীহা। সেইসঙ্গে নষ্ট হয় বাম কানের শ্রবণশক্তিও। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। তবে হার মানেননি অ্যামি। বরং, সুস্থতার পরেই প্রস্থেটিক পা-এ ভর করেই পুনরায় শুরু করেন স্নো-বোর্ডিং। অবশ্য শুরুতেই যে সাফল্য পেয়েছিলেন তেমনটা নয়। চেষ্টা করতে গিয়ে বার বার পড়ে গেছেন অ্যামি, তারপর আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। কখনও আবার হাজির হয়েছেন থেরাপিস্টের কাছে। বলতে গেলে স্নো-বোর্ডিং-ই হয়ে উঠেছিল তাঁর স্বাধীনতার ফুরসৎ।
পেশাদার ক্রীড়াজগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ এরও বছর কয়েক পরে। সেটা চলতি শতকের প্রথম দিক। রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্যের পর, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অ্যামি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১০ সালে। তার ঠিক পরের বছরেই নিউজিল্যান্ড উইন্টার গেমসের দেশকে সোনা এনে দেন তিনি। ২০১৪ ও ২০১৮-র উইন্টার অলিম্পিকেও রয়েছে তাঁর তিন-তিনটি পদক।
তবে শুধু নিজের সাফল্যই নয়। অ্যামির লক্ষ্য ছিল, শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য তিনি গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অ্যাডাপটিভ অ্যাকশন স্পোর্টস’। স্পল্প মূল্যে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের বিভিন্ন খেলার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এই সংগঠন।
ক্রীড়াবিদ ও সমাজসেবীর বাইরেও আরও একটি পরিচয় রয়েছে তাঁর। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অভিনেত্রীও বটে। হ্যাঁ, বর্তমানে সে-দেশের বেশ কিছু সিনেমা ও সিরিজে অভিনয় করেছেন অ্যামি। নৃত্যপরিবেশ করেছেন ২০১৬ অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও। পেয়েছেন মিস অ্যামেরিকা সম্মাননা ও বেস্ট-সেলার লেখিকার খেতাবও। অ্যামির এই লড়াই সত্যিই অনুপ্রাণিত করার মতোই। ইচ্ছেশক্তির জেরে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকেই হারানো সম্ভব, তা-ই বারে বারে প্রমাণ করেছেন ৪২ বছর বয়সি প্যারা-অ্যাথলিট…
Powered by Froala Editor