“করোনা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে আমফান-ইয়াসের প্রবল দুর্যোগের মধ্যে লড়াই করেছে বাংলা। আর সেখানে বাংলার ছাত্র-যুবরাই থেকেছে একেবারে প্রথম সারিতে। কোনো বিচারক যদি এরপরেও পশ্চিমবঙ্গের যুবসমাজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তার থেকে হতাশাব্যঞ্জক আর কিছু হতে পারে না।” বলছিলেন জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২০-২১-এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মনোনীত প্রার্থী শুভম রায় গুপ্ত। রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর নাম পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় বিচারকদের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে বাদ পড়েছেন তিনি। অবশ্য তিনি একা নন। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছর দেশের যুবসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সর্বাধিক ২৫ জনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা। অথচ এই বছর পুরস্কার প্রাপকের সংখ্যা মাত্র ৭। স্পষ্টতই নানা রাজ্যের মনোনীত অসংখ্য প্রার্থীই বাদ পড়েছেন তালিকা থেকে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে জমা হতে শুরু করেছে অসন্তোষের ক্ষোভ।
শুভমের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিরাও। মধ্যপ্রদেশের প্রতিনিধি উমেশ পানসারির কথায়, “কেন্দ্র সরকার নিজেই নিজের তৈরি নিয়মাবলি ভঙ্গ করেছে। তাই অভিযোগ জানাতে গেলেও তো আবার তাঁর কাছেই যেতে হবে। তাই সেখান থেকে কোনো উপযুক্ত উত্তর পাওয়ারও আশা নেই। কিন্তু আমরা দেশের জনগণের কাছে এই বার্তাটা রাখতেই পারি, যে কেন্দ্রীয় স্তরের একটি পুরস্কারের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার প্রশ্নে তাঁরা সরব হয়ে উঠুন।” একই কথার সুর শোনা গেল মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি গৌরব দালালের কথায়। তিনি জানালেন, “আমরা ইতিমধ্যে নানা রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মঞ্চ গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কেন্দ্রের কাছে বিষয়টির স্বচ্ছতা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা বলেছেন, বিচারকদের মন্তব্যই শেষ কথা, এবং বাকিদের যোগ্য মনে করা হয়নি বলেই তালিকায় নাম নেই।”
রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বিচারের মধ্যে এই বিরাট ব্যবধান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ছত্তিশগড়ের প্রতিনিধি সতীশ শর্মা প্রশ্ন তুলছেন, “তাহলে কি ধরে নিতে হবে দুই স্তরের সরকারি শাসকদলের মধ্যে মতানৈক্যের ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের? এভাবে তো দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোই সংকটের মধ্যে পড়বে।” এমনই নানা প্রশ্ন উঠে আসছে জাতীয় যুব পুরস্কারের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। আর তার সঙ্গে উঠে আসছে দীর্ঘদিন ধরে বাংলার বঞ্চনার প্রশ্নটিও। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদানের কর্মসূচি। এর মধ্যেই একাধিকবার বাদ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শুরুর ৩ বছরের পুরস্কার প্রাপকদের তালিকাতেও ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের কোনো প্রতিনিধি। শুভম রায় গুপ্ত তাই বলছেন, “বিষয়টা ব্যক্তিগত স্তরের নয়। আর শুধু এই পুরস্কারের তালিকার মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই। আমরা এর মধ্যে বারবার দেখেছি বাংলার সংস্কৃতি এবং বাঙালিদের প্রতি কেন্দ্র সরকার বারবার উদাসীনতা দেখিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়েই দেখেছি কীভাবে উত্তরপ্রদেশের পাঠক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরাই এই রাজ্যে এসে বারবার রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্রের কথা বলেছেন। তাহলে সবটাই কি বাঙালির ভোট দখলের জন্য?”
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সদর্থক উত্তর না পেলে বৃহত্তর স্তরে অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। হয়তো স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতেও প্রত্যেকের নাম থাকত না। কিন্তু যে পুরস্কার ২৫ জনকে দেওয়ার কথা, তার তালিকায় মাত্র ৭ জন কেন? এই প্রশ্ন থেকেই যায়।
Powered by Froala Editor